Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

sharebazarবড় ধরনের ধস দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমছে। ফলে বড় পতন হয়েছে মূল্যসূচকের। সেই সঙ্গে লেনদেন নেমে গেছে ২০০ কোটি টাকার ঘরে। এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে শেষ ১২ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ দিনই পতন ঘটল।

এমন অব্যাহত দরপতনের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। পতন কাটাতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা কাজে আসছে না। তবে আর্থিক খাতের অনিয়ম, তারল্য ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের কারণে শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

chardike-ad

অবশ্য শেয়ারবাজারের তারল্য সংকট কাটাতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে রেপোর (পুনঃক্রয় চুক্তি) মাধ্যমে অর্থ সরবরাহের সুযোগও দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বন্ড বিক্রি করে পাওয়া ২০০ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

তবে এসব পদক্ষেপেও বাজারে তারল্য বাড়েনি। বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও তারল্য সংকট অব্যাহত রয়েছে। এতে লেনদেন কমতে কমতে ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। ধারাবাহিক পতনের কবলে পড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতনের আভাস দেখা দেয়। প্রথম ঘণ্টার লেনদেনেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৭০ পয়েন্ট পড়ে যায়। এরপর আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি সূচকটি। তবে শেষ সময়ে পতনের প্রবণতা কিছুটা কমে। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স ৫২ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭০৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসই-৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৬৬০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মূল্যসূচকের এই পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ৩০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯২টির।৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। দিনভর ডিএসইর লেনদেন হয়েছে ২৮৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৫০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ বাজারটিতে লেনদেন কমেছে ৬২ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

লেনদেন খরার বাজারে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল টিউবসের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনের ৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মুন্নু জুট স্টাফলার্স।

এছাড়া লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সিলকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, রেনেটা, গ্রামীণফোন, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক সিএএসপিআই ১৬২ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৩২০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৩টির। ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

শেয়ারবাজারের এমন করুণ দশার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজারের জন্য টোটকা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ ধরনের টোটকা ওষুধে কাজ হবে না। শেয়ারবাজার ভালো করতে হলে দেশি-বিদেশি, সরকারি-বেসরকারি ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতের যে সমস্যা রয়েছে তার সমাধান করতে হবে।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসার মতে, এ মুহূর্তে শেয়ারবাজারে সব থেকে বড় সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারবিমুখ হয়ে গেছেন। ফলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাজারে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।