দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে দেয়া-নেয়ার ব্যাপার থাকলেও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে সেটা নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। বাংলাদেশ শুধু ভারতকে দিয়েই যাচ্ছে। বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই পাচ্ছে না।
৩-৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর চারদিনের ভারত সফরে সই হওয়া বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক এবং চুক্তির বিষয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি। ২০১৭ সালের পর এ প্রথম নয়াদিল্লি সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এটিই তার প্রথম ভারত সফর।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এই সাতটি চুক্তির একটি হচ্ছে ফেনী নদীর পানি। চুক্তি আওতায় দুই দেশের অভিন্ন ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি তুলে নেবে ভারত। এই পানি তারা ত্রিপুরা রাজ্যর সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে।
এছাড়া, উপকূলীয় এলাকায় নজরদারিতে বাড়াতে ভারতের রাডার স্থাপন, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের বিষয়েও একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই হয়েছে। এসব চুক্তির বিষয়ে দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘বরাবরই বাংলাদেশ ভারতকে সবসময় দিয়েই গেছে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরেও তার ব্যতিক্রম হলো না।’
তার মতে, ভারতের কাছে বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্র নীতিই এর একমাত্র কারণ। তিনি বলেন, নিজেদের জাতীয় স্বার্থকে রক্ষা না করে ভারতের জাতীয় স্বার্থকে রক্ষার নীতি বাংলাদেশকে একটা করদ রাজ্যতে পরিণত করছে।
বাংলাদেশের ‘নতজানু’ পররাষ্ট্র নীতির কারণ ব্যাখ্যা করে দিলারা চৌধুরী বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে দেয়া-নেয়ার যে সম্পর্ক থাকে তা ভারতের সঙ্গে কখনোই আমরা করতে পারিনি। আমরা শুধু দিয়েই যাচ্ছি। এটা সম্ভব হয়েছে জাতীয় ঐক্য না থাকার কারণে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জাতি হিসেবে বিভক্ত। আমাদের কোন জাতীয় ঐক্যমত নেই। কোন কিছুতেই একতাবদ্ধভাবে আমরা বলতে পারি না, করতে পারি না।’
এদিকে উপকূলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার (কোয়েস্টাল সারভাইল্যান্স সিস্টেম-সিএসএস) বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে ভারত ও বাংলাদেশ। এর আওতায় বাংলাদেশের উপকূলে ২০টি রাডার সিস্টেম নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে ভারত।
বলা হচ্ছে, এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর এলাকায় কড়া দৃষ্টি রাখবে ভারত। যা সমুদ্রপথে যেকোনো সন্ত্রাসী হামলা শনাক্ত করার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের নৌসীমানায় দৃষ্টি রাখতে পারবে।
দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি ভালোভাবে নেবে না চীন। তারা মনে করতে পারে এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। বিষয়টি আমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় বলে এসেছেন বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে অন্য রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে দেব না। বাংলাদেশে আটক হওয়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যেসব বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরও এ কারণে বিনা শর্তে ফেরত দেয়া হলো।’ ‘কিন্তু ভারতের সঙ্গে করা এই কোয়েস্টাল সারভাইল্যান্স সিস্টেম চুক্তি তার সেই বক্তব্যের সম্পূর্ণবিরোধী,’ বলেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
দিলারা চৌধুরী মনে করেন, চীন এখন এমন একটা শক্তি, যার উত্থানকে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র রুখতে পারবে না। আর চীনের মতো বন্ধু রাষ্ট্রও বাংলাদেশের প্রয়োজন রয়েছে।
লেখক- জেসমিন পাপড়ি