চলতি বছরের নয় মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে অর্ধেকই এসেছেন সৌদি আরব থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গন্তব্য দেশগুলোতে আইনি কঠোরতা এবং শ্রমিকদের অনিবন্ধিত হয়ে পড়ার কারণেই তাদের ধরে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এই নয় মাসে প্রায় এক হাজার নারীকর্মীও দেশে ফেরত এসেছেন।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সাড়ে চার হাজার, ওমান থেকে প্রায় তিন হাজার, মালয়েশিয়া থেকে আড়াই হাজার, কাতার থেকে দেড় হাজার এবং মালদ্বীপ থেকে ফিরেছেন এক হাজার বাংলাদেশি।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল ইসলাম বলেন, সাধারণত গন্তব্য দেশে চুক্তির চেয়ে অতিরিক্ত সময় থাকা, অনিবন্ধিত হয়ে পড়া ইত্যাদি কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
‘তবে সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের বিষয় একেবারেই আলাদা। ফেরত আসা শ্রমিকদের অনেকের কাছেই আকামা অর্থাৎ বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। কেন তারা ফিরে আসছেন, বিশেষ করে যাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই তারা ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা তো খরচের টাকাও তুলতে পারছেন না। কেন তারা ফিরে আসছেন- সেটা খুঁজে বের করা জরুরি। পরে সে অনুযায়ী করণীয় ঠিক করতে হবে। কারণ না জানলে করণীয় তো ঠিক করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘ফ্রি ভিসা বলে কিছু নেই। তারপরও বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি ফ্রি ভিসার নাম করে বিদেশে শ্রমিক পাঠাচ্ছে। এ বিষয়টিও তদন্তের আওতায় আনা উচিত।’
গত মঙ্গলবার সৌদি আরব থেকে ফেরত আসেন ১৬০ বাংলাদেশি পুরুষ কর্মী। তাদের জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তারা জানান, আকামা (কাজের বৈধ কাগজপত্র) থাকা সত্ত্বেও তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। সৌদি আরব থেকে আসা ওই দলটিসহ গত এক সপ্তাহের মধ্যে মোট ৩৮৯ বাংলাদেশি কর্মী বাংলাদেশে ফেরত আসেন।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সৌদি আরব সফর করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তার সফরের মধ্যেই দৃষ্টিকটুভাবে বাংলাদেশিদের ধরে ধরে দেশে ফেরত পাঠায় সৌদি প্রশাসন। যাদের অনেকেরই বৈধ ভিসা ছিল।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সৌদি সফরেও দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করি দ্রুত এ বিষয়ের সমাধান হবে।’
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ কাতার, ওমান ও কুয়েতও বিদেশি কর্মী নিয়োগ সঙ্কুচিত করেছে। তাই বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই চাকরির জন্য যেসব বাংলাদেশি এসব দেশে যাচ্ছেন, তারা বড় সমস্যায় পড়ছেন বলে জানিয়েছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।
সৌদি শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ১২ ক্যাটাগরিতে বিদেশি শ্রমিক নেয়া নিষিদ্ধ করেছে। গাড়ি ও মোটরসাইকেলের শোরুম, তৈরি পোশাক ও আসবাবপত্রের দোকান এবং বাড়ির সরঞ্জাম ও বাসন সামগ্রীর জন্য বিদেশি কর্মী নিয়োগ নিষিদ্ধ করেছে দেশটি।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ