Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

malaysia-shopinদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়া। দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পর্যটন নগরী মালয়েশিয়ার বাজারে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রফতানিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ।

১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের মোট রফতানি ছিল ২৩২.৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৭৭.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

chardike-ad

সম্প্রতি বছরগুলোতে দু’দেশের বাণিজ্য ক্রমবর্ধমানভাবে প্রসারিত হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে ভারতের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠছে বাংলাদেশ।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রফতানি হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩২.৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২১১.৫২, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৯১.০৫, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৪০.০৯, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৩৫.৬৪, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০০.১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতারি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মালয়েশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প, হিমায়িত মাছ, কাঁকড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, মসলা, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, আলু, সিরামিক টেবিলওয়্যার ও হালাল খাদ্যপণ্য রফতানি হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি হচ্ছে তৈরি পোশাক ও কৃষিজাত পণ্য।

রফতানির বিপরীতে মালয়েশিয়া থেকে পণ্য আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৪০৬.৭০, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৯০৩.১০, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২০৮৪.১০, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১২৮৭.৫০, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯৫২.৩০, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০১৭.৫০, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪১০.৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করেছে বাংলাদেশ। আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে ভোজ্য তেল, পেট্রোলিয়াম পণ্য (গ্যাসোলিন), ইলেকট্রনিক সামগ্রী, রাসায়নিক, ইস্পাত, রাবার, আসবাব ইত্যাদি।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) মো. রাজিবুল আহসান জানান, রফতানি বাজার হিসেবে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। মালয়েশিয়াতে রফতানি বাজার অধিকতর সম্প্রসারিত হলে আসিয়ানভুক্ত অন্যান্য দেশেও রফতানি দ্বার উন্মোচিত হবে।

তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে মালয়েশিয়ায় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কূটনীতি জোরদারের পাশাপাশি বাংলাদেশ হাইকমিশন নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পণ্য রফতানিতে শুল্ক বাঁধা দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ, মালয়েশিয়ার ডিউটি ফি কোটা-ফ্রি (ডিএফ কিউএফ) লিস্টে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তকরণ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মেলা ও ইভেন্টে অংশ গ্রহণ। এছাড়া মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে নিয়মিত রোডশো ও ব্রান্ডিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।

রাজিবুল আহসান জানান, মালয়েশিয়া বৈশ্বিক হালাল বাণিজ্যের প্রাণ কেন্দ্র। হালাল পণ্য রফতানির মাধ্যমে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি পণ্য রফতানি আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রেডিমেড গার্মেন্টস পণ্য রফতানি করে বছরে কমপক্ষে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব। বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্য ধীরে ধীরে মালয়েশিয়ার বস্ত্রবাজার দখল করে নিচ্ছে।

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর হাংতুয়া লরং মেহের বাউ অব জালান কেনাঙ্গাস্থ বৃহৎ বাংলাদেশি রেডিমেট গার্মেন্টস মার্কেটের পণ্য মালয়েশিয়াসহ পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করছে। হাংতুয়া লরং কেনাঙ্গাস্থ বাংলাদেশি রেডিমেড গার্মেন্টস মার্কেটে প্রতিদিন উপচেপড়া ভিড় লেগেই থাকে।

মালয়েশিয়া প্রবাসী ব্যবসায়ী কে এম হাসান বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রবাসী ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশি রেডিমেড গার্মেন্টস পণ্যের বাজার দখল করতে সক্ষম হচ্ছে।

ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রেডিমেড গার্মেন্টস পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। হাংতুয়ার বাংলাদেশি মার্কেটের রকমারি পণ্যের গুণগত মান তুলনামূলক ভালো হওয়ায় মালয় ও চাইনিজ ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। প্রবাসী বাংলাদেশি শোরুমের মালিক ও সেলসম্যানরা মালয় ভাষায় পারদর্শী হওয়ায় ক্রেতাদের সহজেই আকৃষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে প্রতিবছর রেডিমেড গার্মেন্টস পণ্য বিক্রি করে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব।