Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

palashআউট সোর্সিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, এসইও, ওয়েব ডিজাইন এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রথমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা হয়। এরপর দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। রাজধানীতে এ ধরনের কয়েকটি প্রতারক চক্র আছে। এদের ধরতে আইন প্রয়োগকারী কয়েকটি সংস্থা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বেশকিছু দিন ধরে।

এমন একটি চক্রের প্রধান ধানমন্ডির রেক্স আইটি ইনস্টিটিউটের মালিক আব্দুস সালাম পলাশ। দীর্ঘদিন ধরে তথ‌্য প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের ফাঁদ পেতে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

chardike-ad

তবে শেষরক্ষা হয়নি আব্দুস সালাম পলাশের। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে ধরা পড়ে এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের মুখোমুখি এ প্রতারক। ফৌজদারি অন্যান্য অপরাধের তদন্তের দায়িত্ব সিআইডির হলেও পলাশের অবৈধ সম্পদের পাহাড়ের সন্ধানে নেমেছে দুদক।

ঢাকায় ৫২ কাঠা জমি, মোহাম্মদপুরে ২ হাজার ১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, দামি দুটি গাড়ি ও ব্যাংকের এফডিআর মিলিয়ে কয়েক শত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন পলাশ। সম্পদের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে গত সপ্তাহে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান ঢাকার ভূমি অফিস, রাজউক, দুই সিটি করপোরেশন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের চিঠি দিয়েছেন বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। অনুসন্ধানকাজ তদারকি করছেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১০ মে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পলাশকে। এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি আউট সোর্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, ওয়েব ডিজাইন এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রশিক্ষণ দিত। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা রি-পেইড মার্কেটিংয়ের প্রচারণা চালাত। রেক্স আইটিতে বিনিয়োগ করলে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ রিটার্নের অবিশ্বাস্য অফার দেয়া হতো। এই প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদেরকে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা হতো। প্রশিক্ষণার্থীরাও প্রলোভনে পড়ে বিনিয়োগ করেন। অফারটি বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে দেয়া হলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পলাশ জানিয়েছেন, প্রথমে ফ্রি মার্কেটিং ক্যাম্পেইনে আগ্রহীদের নেয়া হতো। পরে তাদের পেইড মার্কেটিংয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হতো। বিনিয়োগকারীদের বলা হতো, পেইড মার্কেটিং করতে তাদের পেপ্যাল অথবা ইন্টারন্যাশনাল কার্ড থাকতে হবে। আর বাংলাদেশে যেহেতু পেপ্যালের কার্যক্রম নেই তাই তারা সরাসরি এখানে মার্কেটিং করতে পারবেন না। পলাশের আমেরিকান অ্যাকাউন্ট ছিল, তা দেখান এবং আরো বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে এডভারটেন গোল্ড নামের একটি সাইট তৈরি করেন। তাই অনেকে এখানে বিনিয়োগ করেন।

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের হাসান মাহমুদ নাঈম আউটসোর্সিংয়ের কাজ শেখার জন্য ২০১৮ সালে রেক্স আইটি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিলেন। হাসান ১ হাজার ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিষ্ঠানটি পরের মাসে লাভসহ ১ হাজার ৮০০ ডলার দেয়। পরে মোট ৫১ হাজার ৯০৬ ডলার বিনিয়োগ করেন। কিন্তু আর কোনো অর্থ হাসান ফেরত পাননি বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

সিআইডি ও দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পলাশ পেইড মার্কেটিংয়ের নামে প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাত করতে শুরু করেন। আট মাসে তিনি পূর্বাচলে নাভানার একটি প্রজেক্টে নিজের নামে ৪০ কাঠা জমি কিনেছেন। এছাড়া, পূর্বাচলে কিনেছেন নিজ নামে আরো ৬ কাঠার একটি প্লট। সাভারে নাভানার আরেকটি প্রজেক্টে কিনেছেন ৬ কাঠার দুটি প্লট। শুধু প্লট নয়, মোহাম্মদপুরের রোকেয়া গার্ডেন উদ্যানে একটি ফ্ল্যাট, ৬০ লাখ টাকা মূল্যের পাজেরো ভি৬ মডেলের একটি বিলাসবহুল গাড়ি, স্ত্রী মনিরাতুল জান্নাতের ব্যবহারের জন্য একটি টয়োটা এক্স প্রিমিও কিনেছেন পলাশ। নিজের নামে শুধু সিটি ব্যাংকে ১৬টি, ডাচ-বাংলা ব্যাংকে তিনটি এবং ইস্টার্ন ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। পলাশের স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার তিনটি এফডিআর রয়েছে। এরইমধ্যে এসব ব্যাংক হিসাব লক করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরে পলাশের নিজ নামে ২ হাজার ১০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কেনা থাকলেও স্ত্রীসহ তিনি থাকতেন বসুন্ধরা এলাকার বিলাসবহুল একটি ডুপ্লেক্স অ্যাপার্টমেন্টে।

পলাশকে গ্রেপ্তারের পরপরই ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি এবং মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ আইনে আরো একটি মামলা করে সিআইডি। সে মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন পলাশ।

লক্ষ্মীপুরের সোনাইমুড়ী হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন পলাশ। পরে ঢাকায় ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ধানমন্ডির চার্টার্ড ইউনিভার্সিটি কলেজে সিএ-তে ভর্তি হন। পড়াশোনা শেষ না করেই ২০১৬ সালে প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন আইটি ভিশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। মাত্র ৯ মাস কাজ করেই কয়েকজন অংশীদার সঙ্গে নিয়ে রেক্স আইটি নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ পাতেন পলাশ। এছাড়া, আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একইভাবে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।