প্রত্যেক জাপানিদের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক আর মিডল স্কুলে পড়তে হয়। আর এটাই হচ্ছে ওই দেশের শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় ছয় বছর, মিডল স্কুল তিন বছর এবং দুটি একত্রে যোগ করে নিলে হয় মোট নয় বছর। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুরা ছয় বয়স থেকে যায়। সেই বয়স হলেই কেবল শিশুরা স্কুলে যেতে পারে। অনেক শিশু সরকারি স্কুলে যায়। তবে বেসরকারি স্কুলেও কেউ কেউ যায়।
জাপানের প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রী যখন স্কুলে যেতে শুরু করে, তখন একটি টুপি ওরা পরে আর ‘রানদোশেরু’ নামের থলের ভেতরে পাঠ্যপুস্তক রাখে। টুপি একেক স্কুলের ভিন্ন রং আর আকারের হয়। কিছু স্কুলে একই রকম পোশাকের ব্যবস্থা আছে। তবে টুপির বেলায় স্কুলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আর রানদোশেরু দেখতে ব্যাক-প্যাকের মতো। সেটা বর্গাকারের ও একটু বাঁকানো এবং কঠিন ও বেশ মজবুত। সেটা নানা রঙের হয়ে থাকে।
সাধারণত ছেলেরা কালো, তবে মেয়েরা লাল রঙের সেই ব্যাগ পিঠে ঝুলিয়ে স্কুলে যায়। তবে ইদানিং নীল, আকাশি ও সবুজ রঙেরও দেখা যায়। শিশুর স্কুলে যাওয়ার সময় তখন সেগুলো পিঠে ঝুলিয়ে নেয় এবং বন্ধুদের সাথে মিলে স্কুলের পথে ওরা হেঁটে যায়। স্কুলে আসার পর অনেক স্কুলে জুতা বদল করে করে ঘরের জুতা পরে নিতে হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানা রকমের ক্লাস আছে। যেমন জাপানি ভাষা, গণিতবিদ্যা, ইতিহাস, শরীরচর্চা, সংগীত ও শিল্প ইত্যাদি। শিশুরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ক্লাস করে। সেরকম একেকটি ক্লাসে এদের সংখ্যা হচ্ছে ৩৫-৪০ জন। প্রতি ক্লাসের জন্য একজন শিক্ষক থাকেন। তিনি ক্লাসে শিশুদের বিভিন্ন বিষয় শেখান। কিন্তু সংগীত আর শিল্প শিক্ষার বেলায় বিশেষজ্ঞ শিক্ষক শিশুদের শেখান। এ ছাড়া জাপানের স্কুলে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কিছু কাজকর্ম শিশুদের করতে হয়। যেমন দুপুরের খাবার সময়, পরিষ্কার করা সময় এবং সকালের সমাবেশের সময়।
অনেক স্কুলে শিশুরা নিজের বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার আনে না। স্কুলে খাবার তৈরি করা হয় এবং সেই খাবার ছাত্রছাত্রীদের খেতে দেওয়া হয়। সকালের ক্লাস শেষ হলে প্রতিটি ক্লাসে খাবার আসে। খাবার বড় পাত্রের ভেতরে রাখা থাকে। খাবারের মধ্যে যেমন আছে ভাত, রুটি, নুডলস, তরকারি, মাছ, মাংস ও ফল ইত্যাদি। প্রতিদিন সেটার পরিবর্তন হয়। তবে শুধু দুধ প্রতিদিন একই রকম থাকে। ক্লাসে খাবার এলে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের প্লেটে সেগুলো তুলে নেয়।
জাপানের স্কুলে ক্লাসরুম পরিষ্কারের দায়িত্বও ছাত্রছাত্রীদের। দুপুরের খাবার খাওয়ার পরে ও দিনের সব ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেই কাজ ওরা করে। ক্লাসরুম ছাড়া বারান্দাও ওদের পরিস্কার করতে হয়। সেখানে ঝাড়ু দিয়ে, ধুলা ঝেড়ে তার তারপর কাপড় দিয়ে মেঝে ওরা মুছে নেয়। প্রতিদিন সেই কাজ ওরা করে।
জাপানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশের হার মোটের অর্ধেকেরও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পার্ট টাইম কাজ করে। রেস্তারায় বা ক্লাম স্কুলে কাজ করা জনপ্রিয়। অনেক শিক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হয়ে চাকরি সন্ধানের জন্য ইন্টার্নশিপ শুরু করে। এবং শিক্ষার্থী যখন চতুর্থ গ্রেডারে পরিণত হয়ে, তখন কাজ খোঁজতে শুরু করে। জাপানি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রবেশ করা কঠিন এবং সহজেই বের হওয়া সহজ।
লেখক- নানা নেগাতা, টোকিও থেকে