রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানকে লাভজনক করতে একগুচ্ছ মহাপরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার। এর অংশ হিসেবে চলতি বছর তিন আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা ছিল বিমান বাংলাদেশের। কিন্তু বিমান তার ফ্লাইট চালু করার আগেই দক্ষিণ কোরিয়ার ’আশিয়ানা এয়ারলাইন্স’ বাংলাদেশ-কোরিয়া সরাসরি ফ্লাইট চালু করছে। আগামী ১৫ নভেম্বর প্রথমবারের মতো দু’দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটি সংগঠন বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়ার (বিসিকে) উদ্যোগে এটি সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে এয়ারলাইন্সটি তাদের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকাও প্রকাশ করেছে।
কোরিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি সংগঠন তৈরির লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর একটি সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। সমন্বয় কমিটির অধীনে ২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিসিকে- এর যাত্রা শুরু হয়। ২০১৫ সালে প্রথম বাংলাদেশি কমিউনিটি সংগঠন হিসেবে এটি কোরীয় সরকারের তালিকাভুক্ত হয়।
বিসিকে সূত্র জানায়, উদ্বোধনী ফ্লাইট আগামী ১৫ নভেম্বর শুরু হবে। ফ্লাইট থাকবে প্রতি সপ্তাহে শুধু শুক্রবার।
কোরিয়ার ইনছন থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছাবে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ১০ মিনিটে। ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ছাড়বে রাত ১টা ২০মিনিটে এবং কোরিয়ায় পৌঁছাবে সে দেশের সময় সকাল ৯টা ৪০মিনিটে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মকিমা বেগম বলেন, ‘নভেম্বরে ঢাকা-কোরিয়া ফ্লাইট চালু একটি বড় ধরনের সুখবর। প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এই বছরে অন্তত দুই হাজারের বেশি জনশক্তি এখানে আসবে। এখানকার শ্রমবাজারের আওতা বাড়ছে। তাই সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপিত হলে তা অবশ্যই ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।’
জানা গেছে, আগামী ছয় মাস এয়ারলাইন্সটি এই রুটে সপ্তাহে একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। অর্থ্যাৎ, নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সপ্তাহে শুধু শুক্রবার একটি ফ্লাইট চালু থাকবে। আগামী বছরের মে মাস থেকে প্রতি সপ্তাহে দুটি ফ্ল্যাট চালু হবে। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গল এবং শুক্রবার চলবে ঢাকা-কোরিয়া ফ্লাইট।
এই ফ্লাইটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ লাখ ওয়ন (কোরিয়ান মুদ্রা)। তবে এই অংককে বেজ ধরে সময় অনুযায়ী ভাড়া বাড়তে-কমতে পারে। একজন যাত্রী যাতায়াতের সময় লাগেজ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে বুকিং দুটিতে ২৩ কেজি করে মোট ৪৬ কেজি এবং হাতে ১০ কেজি বহন করতে পারবেন একজন যাত্রী।
এই বিমানের আসন ২৭৬টি। টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে। অনলাইন অথবা ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট কেনা যাবে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের সেরা ১০ ইকোনমি ক্লাস এয়ারলাইন্সের অন্যতম আশিয়ানা এয়ারলাইন্স। ইকোনমি ক্লাসের এয়ারলাইন্সের মধ্যে আশিয়ানা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ২০১৭ সালে এয়ারলাইন্সটি আপগ্রেড করা হয়।
এদিকে, রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানকে লাভজনক করতে একগুচ্ছ মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যেসব আন্তর্জাতিক নতুন রুট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে, তার মধ্যে ঢাকা-সিউল-জাপান রুটও রয়েছে।
জানা গেছে, এই রুটে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনার কার্যক্রমেরও অগ্রগতি হয়েছে। সিউল-ঢাকা-সিউল ফ্লাইট চালুর একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০১৫ সালে। তখন কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন জুলফিকার রহমান। তখন কোরিয়ান এয়ার অথবা এশিয়ানা এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে সিউল-ঢাকা-সিউল রুটে ফ্লাইট চালুর চেষ্টা করা হয়। তবে এবার সরকার চাইছে বিমান বাংলাদেশের মাধ্যমেই ফ্লাইট চালুর।
দক্ষিণ কোরিয়া অন্যতম বাংলাদেশি জনশক্তি আমদানিকারক দেশ। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, ২০১৮ অর্থবছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় গেছেন ২০১২ জন কর্মী। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যান ২২১৫ জন কর্মী। এছাড়া ২০১৯ সালে তিন হাজার কর্মীর চাহিদার কথা জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।
সৌজন্যে- রাইজিং বিডি