Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

denguছিমছাম মালয়েশিয়া…. এক ঋতুর দেশ। সারা বছর বৃষ্টি থাকে। সেখানে প্রচুর ডেঙ্গু রোগী। তাদের জন্য আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। ব্যক্তিগত কাজে মালয়েশিয়ায় যাই। কয়েকদিন কুয়ালালামপুর থাকি। সেখান থেকে লংকাউই গিয়ে জ্বর অনুভব করি। তাই তাড়াহুড়ো করেই কুয়ালালামপুর ফিরে আসি। জানাশোনা সবাই বলল, ডেঙ্গু হতে পারে। আমি হাসপাতালে গেলাম। রক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসক বললেন, ডেঙ্গু হয়েছে। রোগটি সম্পর্কে আমার ধারণা পরিষ্কার না থাকায় হাসপাতাল থেকে হোটেলে ফিরে আসি। জ্বরের মাত্রাও বাড়ল। শরীরে প্রচন্ড ব্যথাও অনুভব করতে থাকি। আবার গেলাম হাসপাতালে। সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসক স্যালাইন পুশ করলেন। একটি শেষ হলেই আরেকটি স্যালাইন দেওয়া হলো।

দেখলাম, সেখানে প্রচুর ডেঙ্গু রোগী। তাদের জন্য আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। তখনই জানলাম, মালয়েশিয়া ডেঙ্গুপ্রধান দেশ। সারা বছর বৃষ্টির কারণে দেশটিতে এডিস মশাও প্রচুর। যদিও সরকার সারা বছর ওষুধ ছিটায়। হাসপাতালে যেতেই কর্তৃপক্ষ জানতে চাইল, আমি কোথায় ছিলাম। আমার ঠিকানা নিয়ে ওই এলাকা এবং এর আশপাশে আধা কিলোমিটার মশার ওষুধ ছিটানো হলো। এ হলো তাদের মশারোধের অন্যতম ব্যবস্থা।

chardike-ad

চিকিৎসা শুরু হলো। আমাকে প্রথমে বেশি গতিতে, মিনিটে ১৮-২০ ফোঁটা করে স্যালাইন দেওয়া হলো। ৩ ব্যাগ স্যালাইন শেষ হওয়ার পর গতি কমানো হলো। মিনিটে ৬ থেকে ৮ ফোঁটা দেওয়া হলো। প্রতিঘণ্টায় রক্ত পরীক্ষা করে প্লাটিলেট দেখা হলো। একটি পানি পরিমাপ করার মগ দেওয়া হলো। বলা হলো, প্রস্রাব করতে হবে ওই মগে। প্রতি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রস্রাব করতে হবে, যা একজন স্বাভাবিক মানুষের ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর হয়ে থাকে। অর্থাৎ আমাকে এতটাই পানি এবং তরল পদার্থ পান করানো হলো যে, ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রস্রাবের বেগ হতো। ২ দিন হাসপাতালে ছিলাম। কী পরিমাণ পানি পান করেছি তা অনুমান করা যাবে না।

এরপর স্যালাইনের পরিমাণ ৪ ফোঁটায় নামানো হলো। প্রতি ঘণ্টায় রক্ত পরীক্ষা হাসপাতাল ছাড়ার আগ পর্যন্ত চলল। মাঝে মাঝে কিছু ওষুধ খাওয়াল। খাবারে করলা থাকল প্রতি বেলায়। জেনেছি, ডেঙ্গু রোগীর জন্য এটি নাকি বিশেষ খাবার।

চিকিৎসকের অনুমতির কিছুদিন পর হাসপাতাল ছাড়লাম। দেখলাম, শত শত রোগীকে একই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করানো হচ্ছে এবং সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। আমি মনে করি, ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যাপারে মালয়েশিয়ার পরামর্শ নিতে পারি জরুরি ভিত্তিতে।

হাসপাতাল ছাড়ার পর চিকিৎসক আমাকে পেঁপে পাতার জুস (মালয়েশিয়ায় বোতলজাত পাওয়া যায়) খেতে দিলেন। এই জুস খাওয়ার পর আমি শরীরে বেশ জোর পেলাম। জেনেছি, পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেট বাড়াতে খুবই সাহায্য করে।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি, মালয়েশিয়ায় সারা বছরই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত। ডেঙ্গু নিয়ে তাদের গবেষণাও বেশ ভালো। মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা গেলে আমাদের দেশের অনেক প্রাণ বাঁচবে।

ফেসবুক থেকে সংগৃহিত