জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের বিষয়ে ভারতীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠকে কাশ্মীরের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছে চীন। শুক্রবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে চীন কাশ্মীর পরিস্থিতিকে ভয়াবহ ও বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছে। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায় চীন।
চীনা কূটনীতিক নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছে, ভারত সরকারের এমন ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত ‘বৈধ নয়’। চীন ও পাকিস্তানের অনুরোধে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে কূটনীতিকদের বরাতে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কাশ্মীর নিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এবং চীন পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে আসছে।
নিরাপত্তা পরিষদের এক কূটনীতিক জানান, বৈঠকটি রুদ্ধদ্বার হওয়ার কারণে পাকিস্তান ও ভারত তাতে অংশগ্রহণ করেনি। এই ধরনের বৈঠক সম্প্রচার বা সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
এক সংবাদ সম্মেলনে চীন দাবি করে, সংবিধান সংশোধন করে ভারত সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। চীনা কূটনীতিক বলেন, এই মুহূর্তে কাশ্মীরের পরিস্থিতি বিপজ্জনক। কাশ্মীরের দীর্ঘদিনের অবস্থা ভারতের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে গেছে।
ভারতকে কাশ্মীর ইস্যুতে একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে চীনা কূটনীতিক বলেন, এমন একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ বৈধ নয়। বিষয়টি জাতিসংঘের চার্টার অনুসারে সমাধান হওয়া উচিত।
জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মালিহা লোদি নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর ইস্যুতে বৈঠক আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছেন। বৈঠক আয়োজনে চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, আজ কাশ্মীরি মানুষের কথা শোনা হয়েছে। তারা একা না। জম্মু-কাশ্মীরের শান্তিপূর্ণ সমাধানে আমরা প্রস্তুত। এই বৈঠকে প্রমাণিত হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়।
চীনা দূত মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এটাই একমাত্র ও শেষ পদক্ষেপ না। ৫ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্টে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়। এ কারণে সায়ত্বশাসন হারায় কাশ্মীরিরা। সেখানে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা নন এমন নাগরিকদের সম্পত্তি কেনা ও বিয়ে করার সুযোগ করে দিয়েছে ভারত।
এর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে কাশ্মীরিরা। তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। অবরোধও চলছে। এদিকে ওই দিনটি থেকে কাশ্মীরের টেলিফোন লাইন, ইন্টারনেট ও টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে রেখেছে দিল্লি এবং লোকজনের অবাধ চলাচল ও জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। দুইজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আব্দুল্লাহসহ কয়েকশ কাশ্মীরি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বরাবর একটি চিঠি লিখেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি। তিনি চিঠিতে ভারতের সিদ্ধান্ত নিয়ে বৈঠকে বসার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান।
চিঠিতে কুরেশি লিখেছেন, ‘পাকিস্তান কাশ্মীরে যুদ্ধের উস্কানি দেবে না। কিন্তু ভারত যেন আমাদের সংযমকে দুর্বলতা না ভাবে। ভারত যদি ফের শক্তি প্রয়োগ করার পথে যায়, আত্মরক্ষার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে পাকিস্তান জবাব দিতে বাধ্য হবে।’
এদিকে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে বিধিনিষেধ আরোপের খবরে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন মহাসচিব।
১৯৪৮ সালে ও ১৯৫০-র দশকে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের বিরোধের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। এর মধ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গণভোট নেয়ার কথাও ছিল। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ১৯৪৯ সাল থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মোতায়েন আছে।