যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন খামারে কসাইয়ের হাতে বর্জ্যের নামে শতশত মণ কোরবানির মাংস চুরির ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রায় এক মাস আগে থেকেই বিভিন্ন গরুর খামারে গিয়ে কোরবানির জন্য গরু ওজন দিয়ে বুকিং দেন। ঈদের দিন এসব খামারে এক-তৃতীয়াংশের বদলে দুই-তৃতীয়াংশ গরুর বর্জ্য ফেলে দেয়ার ঘটনায় অবাক হয়েছেন প্রবাসী মুসলমানরা। তবে এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়, প্রতিবছরই ঘটে এমন ঘটনা। তবে এ ঘটনাকে ‘সুকৌশলে কোরবানির মাংস চুরি’ বলে উল্লেখ করেছেন অনেকেই।
জানা যায়, প্রতিবারের মতো কোরবানি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ম্যাসাচুসেটস, নিউ জার্সি, ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, কানেকটিকাট, নর্থ ক্যারোলিনা, ওহাইও, মিনেসোটা, টেনেসি, নিউ হ্যাম্পশয়ার, মেইন, রোড আইল্যান্ড, ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদুল আজহার এক মাস আগে থেকেই ছুটে যান বিভিন্ন গরুর খামারে। সেখানে জীবন্ত গরু ওজন দিয়ে বুকিং দেন। ঈদের দিন প্রচণ্ড ভিড়ে গরু কাটার পর বর্জ্যমুক্ত এক-তৃতীয়াংশ মাংস ঘরে নিয়ে আসেন। প্রকৃতপক্ষে বর্জ্যমুক্ত দুই-তৃতীয়াংশ মাংস ঘরে আনার কথা। একটি গরুতে এত বর্জ্য ফেলাতে হয় না বলে জানিয়েছেন অভিজ্ঞ কসাইরা।
নিউইয়র্কের একটি গ্রোসারিতে কর্মরত অভিজ্ঞ কসাই জানান, একটি গরু জবাইয়ের পর চামড়া, ভুড়ি ও পা-সহ আনুসাঙ্গিক অঙ্গ-প্রতঙ্গ বাদ দিতে হয়, যা একটি গরুর প্রকৃত ওজনের এক-তৃতীয়াংশ। সে হিসাবে দুই-তৃতীয়াংশ মাংস পাওয়ার কথা।
কিন্ত এবার অধিকাংশ খামারে এক-তৃতীয়াংশ বর্জ্যের বদলে দুই-তৃতীয়াংশ বর্জ্য ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। যা দেখে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তবে এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়, প্রতিবছরই ঘটে এমন ঘটনা। এসব বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তার গরু দেরিতে বা না কাতার হুমকি দেন খামারিরা। এ কারণে কেউ জোর প্রতিবাদ করেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় খামারে ১৫ হাজার, মাঝারি ও ছোট মাঝারি খামারে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার গরু পালন করা হয়। এসব খামার থেকে প্রতি বছর ৩৯ মিলিয়ন গরু জবাই করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে কোরবানির গরুতে একটি ভাগের মূল্য পড়ে প্রায় ২৫০ ডলার (২১ হাজার টাকা)।
নিউইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশি আব্দুল মালেক বলেন, ‘তিনি পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত কোরবানি দিতেন। মাঝে কিছুদিন আর দেননি। এবারে আবার তার বন্ধুদের সঙ্গে কোরবানির গরুতে একটি ভাগ দিয়েছেন। গত ১৫ দিন আগে একটি খামারে গিয়ে গরু ওজন দিয়েছিলেন ১ হাজার ৫৬০ পাউন্ড। ঈদের দিনে বর্জ্য বাদ দিয়ে প্রকৃত মাংস পেয়েছেন মাত্র ৫৬০ পাউন্ড। একটি গরুতে ১ হাজার পাউন্ড বর্জ্য ফেলে দিতে হয় এটা অবিশ্বাস্য যা তিনি কখনই দেখেননি বা শোনেননি। শুধু তাই নয়, মাংস কাটার জন্য বিভিন্ন গ্রোসারিতেও চর্বি ফেলে দেয়ার নামেও নিয়মিত চুরি হয়ে যায় মাংস।’
কানেকটিকাটের একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি নিউইয়র্ক থেকে নিয়মিত গ্রোসারি কিনে আনেন। তিনি অনেক সময় মাছ-মাংস কাটার অর্ডার দিয়ে অন্য বাজার করতে যান। কিন্তু মাছ-মাংস বাড়িতে নিয়ে এসে পর তার সন্দেহ হলে নিজের ঘরেই ওজন দিয়ে তা কম দেখতে পান। সেই থেকে আর ওই দোকানে আর বাজার করেন না। পরে আরেকটি গ্রোসারি দোকানে নিয়মিত বাজার শুরু করেন। কিন্তু সেখানেও একেই অবস্থা দেখতে পান তিনি।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ