Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

kaderঅবশেষে সাতক্ষীরার চার বছর ধরে অন্ধকার গর্তে শিকলবন্দি আব্দুল কাদেরকে (৫৩) শুক্রবার উদ্ধার করেছে পুলিশ। তালা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি রাসেলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল কাদেরকে উদ্ধারের পর তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্বজনদের ধরে মারপিট, ভাংচুর শুরু করার এক পর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়ে তাকে প্রথমে বারান্দায় হাতে-পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা শুরু করেন। তবে, সারাক্ষণ উচ্চস্বরে চিৎকার ও অশ্লীল বাক্যবানে বিরক্ত হয়ে পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে প্রায় তিনশ’ ফুট দূরে বাগানের মধ্যে গাছে বেঁধে রাখতে শুরু করেন। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানদের ফেলে ঠাঁই হয় বাড়ির পাশের বাগানের মধ্যে অন্ধকার গর্তে, যেখানে তিনি চার বছর ধরে আছেন। রাত-দিন ঝড়-বৃষ্টিতে এক হাতে ও এক পায়ে শিকলে বাঁধা পড়েছে তার নিঃসঙ্গ জীবন। সব আশা, আকাংখা, স্বপ্ন-সাধ আটকে গেছে আটো-সাটো একটি গর্ত ও তার উপর পড়ে থাকা একটি ছোট মেহগনি গাছের উপর।

chardike-ad

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের শাহাজাতপুর গ্রামের আব্দুল কাদের (৫৩)। ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৮৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যায়ন অবস্থায় একটি দুর্ঘটনায় ঘটে মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, জমি-জমা সংক্রান্ত একটি পারিবারিক বিরোধে তার এক চাচাতো ভাই তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মম নির্যাতন করে। এতে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও চরমভাবে মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটে তার। চিকিৎসায় প্রাণে বেঁচে গেলেও আর পুরোপুরি ভালো হননি আব্দুল কাদের। চিকিৎসায় কখনো সাময়িক ভাল হয়েছেন, কখনো আবার মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এরিমধ্যে দুবার বিয়ে করেছেন কাদের, প্রথমবার বিয়ের পর এক কন্যাসন্তান হওয়ার কিছুদিন পর মারা যাওয়ার পর তার পাগলামী আরো বেড়ে যায়। পরে আবার বিয়ে করলে দুই কন্যা সন্তানের জনক হন কাদের।

কাদেরের শিকলবন্দি জীবনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকরা গেলে প্রথম দেখাতেই সাংবাদিকদের সালাম দেন তিনি। তারপর একে একে তার জীবনের সব ঘটনার বর্ণনা দিতে থাকেন। কখনো পুরনো স্মৃতি মনে করে আবেগ আপ্লুত হতে দেখা যায় তাকে। তবে তাকে করা সব প্রশ্নের উত্তর দেন মধুর কণ্ঠে, সুরে সুরে। তবে কথার ফাঁকে ফাঁকে নিজের শিকলে বাঁধা জীবন থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও মুক্তির আকূতি জানিয়েছিলেন।

স্থানীয় খেশরা ইউনিয়ন (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রভাষক রাজিব হোসেন রাজু বলেন, এমন অবস্থায় একজন মানুষ তার ইউনিয়নে জীবন-যাপন করছেন, তা তার জানা ছিলো না। সম্প্রতি স্থানীয় এক ফায়ার সার্ভিস কর্মী শেখ আরিফুর রহমান আজগরের সহযোগিতায় দেখতে যান তাকে। তাৎক্ষণিক যৎসামান্য সহযোগিতাও করেছেন। তবে আব্দুল কাদেরের জন্য ভবিষ্যতে কিছু করার চেষ্টা করবেন বলেও জানান তিনি। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শাহাজাতপুর গ্রামের শওকত আলী মোড়লের ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে এমএম আব্দুল কাদের সবার বড়।

সৌজন্যে- রাইজিংবিডি