জুলাইয়ের শেষ দিকে দেশের শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও তা স্থায়ী হয়নি। বরং ঘুরে ফিরে দরপতনের বৃত্তেই আটকে রয়েছে। জুলাইয়ের শেষ দিকে কিছুটা আশার আলো দেখলেও বিনিয়োগকারীরা আবার হতাশ।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বাজারে কারসাজি চক্র সক্রিয়। কারসাজির মাধ্যমে একটি চক্র বাজার থেকে মুনাফা লুটে নিচ্ছে। অন্যদিকে লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারী প্রতিনিয়ত পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। কিন্তু দায়িত্বশীলরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষায় কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
অব্যাহত দরপতনের মধ্যে গত ২২ জুন প্রণোদনা স্কিমের ৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ছাড়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে সংবাদ আসে নির্ধারিত সীমার নিচে বিনিয়োগ থাকা ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে ধুঁকতে থাকা শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। এতে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন পুঁজিহারা বিনিয়োগকারীরা।
কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ সাময়িক দেখা দেয়া ঊর্ধ্বমুখিতা স্থায়ী না হয়ে সপ্তাহ ঘুরতেই আবার পতনের মধ্যে পড়ে। একদিন কিছুটা উত্থান তো পরের দিনই পতন এমন ঘটনা ঘটতে থাকে শেয়ারবাজারে। এ পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার বাজারে সূচকের কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। তবে সোমবার আবার সবকটি সূচকের পতন হয়েছে। এতে ফের হতাশ হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা।
পতনের কবলে পড়ে সোমবার প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা মূলধন হারিয়েছে ডিএসই। এদিন লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনে ডিএসইর মূলধন হওয়া হয়ে গেছে ১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা।
বিনিয়োগকারী মনির হোসেন বলেন, কয়েকদিন পরেই কোরবানির ঈদ। চলতি সপ্তাহের পর ঈদের আগে আর লেনদেন হবে না। ঈদের খরচ জন্য কোনো শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করলেই দাম কমে যাচ্ছে। এ এক ভয়ানক পরিস্থিতি। লোকসান দিয়ে কিছু শেয়ার বিক্রি করেছি। সামনে কি অপেক্ষা করছে বুঝতে পারছি না। বাজারের এ অবস্থা চলমান থাকলে পথে বসতে হবে।
এদিকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৬০ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮২৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সব সূচকের পতনের পাশাপাশি এদিন ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১৩০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৩টির। আর ৪০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, আমরা পুঁজি হারিয়ে প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছি। পুরাতন চক্র বাজারে সক্রিয় হয়ে বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করছে। বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান দিয়ে এই পুঁজিবাজার আর ভালো করা যাবে না। কারণ এই চেয়ারম্যান বিনিয়োগকারীদের পক্ষে কাজ না করে ইস্যুয়ারের (কোম্পানির) পক্ষে দালালি করছে।
বিনিয়োগকারী সোহাগ বলেন, শেয়ারবাজারে কয়েকমাস ধরেই ভয়াবহ দরপতন চলছে। প্রতিনিয়ত আমরা পুঁজি হারাচ্ছি। জুলাইয়ের শেষের দিকে বাজার একটু ঊর্ধ্বমুখিতার আভাস দিয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সবই আই ওয়াশ। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি লুটে নেয়ার নতুন নতুন ফন্দি করা হচ্ছে। বাজারের এ আচরণ আমাদের প্রতিদিন হতাশ করছে। পুঁজিবাজার থেকে বের হয়ে যাব সে উপায়ও নেই। বিনিয়োগ করা অর্থের অর্ধেকেও ঠিক নেই।
সূচকের পতন হলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে ৪৭৭ কোটি ৩৬ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪৬৩ কোটি ৮৫ টাকা। অর্থাৎ লেনদেন বেড়েছে ১৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির ৩১ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের ২৭ কোটি ৩২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ২৫ কোটি ৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মুন্নু সিরামিক।
এছাড়া বাজারটিতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, মুন্নু জুট স্টাফলার্স, ফরচুন সুজ, ড্রাগন সোয়েটার, স্টাইল ক্রাফট এবং সিলকো ফার্মাসিউটিক্যাল।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭৮৮ পয়েন্টে। বাজারটিতে হাত বদল হওয়া ২৬০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১০৯টির, কমেছে ১১৭টির এবং অপরিবর্তিত ৩৪টির দাম। লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।