উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতন নিয়ে বিশ্বে সমালোচিত হচ্ছে চীন সরকার। এর মধ্যেই চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের মুসলিম রেস্টুরেন্টগুলোর ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে রাজধানী বেইজিং থেকে হালাল রেস্টুরেন্ট ও ফুড স্টলগুলো থেকে আরবি ভাষা ও মুসলিম প্রতীক সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর মাধ্যমে তারা চীনের মুসলিম জনসংখ্যাকে `চিনিসাইজ’ বা চীনা ধারার সমাজতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে চাইছে। এ সংক্রান্ত একটি আইনও প্রণয়ন করেছে দেশটি। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স।
সাম্প্রতিক সময়ে বেইজিংয়ে হালাল পণ্য বিক্রি করে এমন ১১টি রেস্টুরেন্ট ও দোকানপাটের কর্মীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, কর্মকর্তারা তাদের ইসলামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছবিগুলো সরিয়ে নিতে বলেছে। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট মুন বা অর্ধচন্দ্র এবং আরবিতে লেখা `হালাল’ শব্দটিও রয়েছে।
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশটিতে ইসলামের `চাইনিজ ভার্সন’ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। রাজধানী বেইজিংয়ের একটি নুডলস শপের ম্যানেজার জানান, বিভিন্ন সরকারি দফতর থেকে তার দোকানের প্রতীক থেকে আরবিতে লেখা `হালাল’ শব্দটি ঢেকে ফেলতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, `তারা বলেছে, এটি বিদেশি সংস্কৃতি এবং তোমার উচিত চীনা সংস্কৃতি আরও বেশি ব্যবহার করা।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য হালাল রেস্টুরেন্ট ও ফুড স্টলগুলোর মালিক ও কর্মীরাও রয়টার্সকে একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন।
চীনে ২০১৬ সাল থেকেই আরবি ভাষা ও ইসলামী ছবি বা প্রতীকবিরোধী অভিযান নতুন মাত্রা পায়। এর উদ্দেশ্য ধর্মগুলোকে `মূল ধারার চীনা সংস্কৃতির’ আওতায় নিয়ে আসা। এর আওতায় মসজিদগুলোকে গম্বুজের বদলে চীনা স্টাইলের প্যাগোডার আকার দেয়ার কথা বলা হয়।
দুই কোটি মুসলিমের আবাসস্থল চীন প্রকাশ্যে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলে থাকে।দাফতরিকভাবে তারা এর নিশ্চয়তাও দেয়। কিন্তু সরকার চাইছে ধর্মবিশ্বাসীদের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলার জন্য। এ জন্য তারা ব্যাপক ধরপাকড় ও সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন ধারার নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশটির একাংশে ইসলামের চর্চা নিষিদ্ধ।নামাজ-রোজার পাশাপাশি দাড়ি রাখা বা হিজাব পরার মতো কারণেও ধরপাকড়ের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে অনেককে।বিভিন্ন মসজিদ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে গম্বুজ ও চাঁদ-তারার প্রতিকৃতি। মাদ্রাসা ও আরবি শিক্ষার ক্লাস নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে শিশুদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একেই তারা বলছে, চীনা ধারার সমাজতন্ত্রের সঙ্গে ইসলামের সামঞ্জস্য তৈরি করা। যারা এটি মানতে চাইবে না,তাদের বিচারের আওতায় নিতেই প্রণীত হয়েছে নতুন আইন।।
জাতিসংঘ জানিয়েছে,প্রবল ক্ষমতার অধিকারী শি জিং পিংয়ের মতাদর্শে শাসিত চীনে ১০ লাখেরও বেশি উইঘুর মুসলিমকে আটক রেখে তাদের ধর্ম পালনে বাধা দেয়া হচ্ছে।বলপূর্বক তাদের কমিউনিস্ট পার্টির মতাদর্শে বিশ্বাস স্থাপন করানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রকাশ্যে নিজ ধর্মের সমালোচনা করতে তাদের ওপর বলপ্রয়োগ করা হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের শপথ করতে হচ্ছে বস্তুবাদে বিশ্বাসী ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আনুগত্যের,যা ইসলামের বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সেই ধারাবাহিকতায় সরকার ইসলামকে তাদের কথিত সমাজতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে উদ্যোগী হয়েছে।এর অংশহিসেবে আরবি ভাষা ও মুসলিম প্রতীক মুছে দিতে চাইছে বেইজিং।