জয় শ্রী রাম স্লোগান দিতে রাজি না হওয়ায় ভারতের উত্তরপ্রদেশে ১৫ বছর বয়সী এক মুসলিম কিশোরের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দেশটির কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদীরা। শুক্রবার প্রদেশের চন্দওলি জেলায় নিমর্ম এই ঘটনা ঘটে। ওই কিশোর বর্তমানে রাজ্যের একটি হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা আইএএনএস বলছে, ১৫ বছরের ওই কিশোর বারানসির কবির চওরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ওই কিশোর বলেন, আমি দুধহারি সেতুতে হাঁটছিলাম। এমন সময় চারজন ব্যক্তি আমাকে তুলে নিয়ে যান। তাদের দু’জন আমার হাত বাঁধেন এবং তৃতীয়জন আমার শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেন। পরে তারা আমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান। এ সময় তাকে জয় শ্রী রাম স্লোগান দিতে জোর করা হয়।
তবে ধর্মীয় এই স্লোগান দিতে ওই কিশোরকে বাধ্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। চন্দওলি জেলার পুলিশ সুপার সন্তোষ কুমার সিং বলেন, ওই কিশোর একেক জনের কাছে একেক ধরনের বক্তব্য দিয়েছে।
বার্তাসংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া অবস্থায় ওই কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিভিন্ন জনের কাছে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেয়ায় আগুনে শরীর ঝলসে যাওয়ার এ ঘটনাকে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এটা তাকে কেউ শিখিয়ে দিয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সিসিটিভি ফুটেজের ভিডিও সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছে পুলিশ। তবে যে সেতু থেকে তাকে অপহরণ ও যেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেসব স্থানের ভিডিও ফুটেজে তাকে দেখতে পাওয়া যায়নি। চন্দওলি জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ এই কর্মকর্তার দাবি, প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছেন ওই কিশোর নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি ভারতজুড়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর পিটিয়ে হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি জয় শ্রী রাম স্লোগান দিতে রাজি না হওয়ায় বেশ কয়েকজন মুসলিমের ওপর হামলা হয়েছে। গত ১৮ জুন ঝারখণ্ডের সেরাইকেলা খারসাওয়ান জেলায় তাবরিজ আনসারি নামের এক মুসলিম তরুণকে মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় থানায় দায়ের করা মামলায় উত্তেজিত জনতা তাবরিজ আনসারিকে জোরপূর্বক জয় শ্রী রাম ও জয় হনুমান স্লোগান দিতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে দেশটির ৪৯জন বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক ও অভিনয় শিল্পী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক চিঠি লেখেন। এতে তারা দেশটির চলমান ক্রমবর্ধমান গণপিটুনি বন্ধে সরাসরি তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।