আর কিছু হোক বা না হোক ২০১৭ সালে প্রায় ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়ে রাতারাতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিল বাংলাদেশ। মিয়ানমারে গণহত্যার খবর যেমন বিশ্ব গণমাধ্যমে ফলাও করে ছাপা হয়েছে তেমনি এই রোহিঙ্গাদের পাশে থাকায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসাও করেছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু কোথায় বাংলাদেশ? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাস্প জানেন না এর অবস্থানের কথা।
বুধবার (১৭ জুলাই) হোয়াইট হাউজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার বিশ্বের ১৯টি দেশের ২৭ জন মানুষের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। এই ২৭ জনের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশি আইনজীবী প্রিয়া সাহা ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে যাওয়া এক রোহিঙ্গা নাগরিক।
এই কথোপকোথনের একটি ভিডিও এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। সেখানে প্রিয়া সাহাকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করতে দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বাঁচাতে তিনি ট্রাম্পকে অনুরোধও করেন।
শুরুতেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দেন প্রিয়া সাহা। ইংরেজিতে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশেই বসবাস করতে চাই। এখনও সেখানে ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু মানুষ বাস করছেন। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে বাস করতে চাই। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি, তারা আমার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, আমার জমি দখল করে নিয়েছে কিন্তু এখনও এর কোনো বিচার হয়নি।’
এ পর্যায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানতে চান, এসব ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে? জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘ইসলামি মৌলবাদী গোষ্ঠী। তারা সবসময়ই রাজনৈতিক ছত্রছায়া পেয়ে আসছে।’ এসময় ট্রাম্প তার এক কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘আমরা কী ওই এলাকায় আমাদের হেলিকপ্টার ল্যান্ড করেছি?’
এসময় বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির থেকে সেখানে যাওয়া এক রোহিঙ্গা নাগরিক নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই।’
এরপর ট্রাম্প জানতে চান, রোহিঙ্গা নাগরিকটি যে দেশের কথা বলছেন সেটা কোথায়? তখন হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা তাকে জানান, মিয়ানমারের পাশেই বাংলাদেশ নামে ওই দেশটি অবস্থিত।
এই ভিডিও প্রকাশের পর থেকে প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে যেমন আলোচনা হচ্ছে তেমনি সমালোচনার হাত থেকে রেহাই মিলছে না ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও। বাংলাদেশকে বা বাংলাদেশের অবস্থান তিনি জানেন না, এই বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না অন্তত বাংলাদেশি নেটিজেনরা। ফলে বিভিন্নভাবে ট্রাম্পকে নিয়ে ট্রল করছেন তারা।
অন্যদিকে, প্রিয়া সাহার অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরাও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা যে নালিশ করেছে তা চক্রান্তের অংশ ছাড়া আর কিছু নয়। শুক্রবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নালিশ সংক্রান্ত ভিডিওটি দেখলাম। তিনি যে অভিযোগ করেছেন এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। ওই নারী কখনও এ ব্যাপারে আমাদের কাছে আসেননি। কিংবা পুলিশ প্রশাসনের কাছেও যাননি। আমাদের পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত সজাগ থাকে যাতে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার না হন।’