Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

amirat-bangladeshiভাগ্য ফেরানোর আশায় বিদেশে যাওয়া কর্মীদের অনেকেই ফেরেন লাশ হয়ে। এতে অসহায় হয়ে পড়ে তাদের পরিবার। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিদেশগামী ও প্রবাসী সব কর্মীকে শতভাগ বীমার আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনার আলোকেই বিদেশগামী কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক বীমা সুবিধা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ৩১ জুলাই থেকে প্রস্তাবিত এ বীমা সুবিধা চালু করবে সাধারণ বীমা করপোরেশন। বীমার মেয়াদ থাকবে দুই বছর। তবে তা নবায়ন করতে পারবেন প্রবাসী কর্মীরা।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ বছরে দেশ থেকে ৬০ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬৯ জন কর্মী বৈধভাবে বিদেশে গেছেন। আর ২০১৮ সালে বৈধভাবে বিভিন্ন দেশে যান ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে এসব কর্মীর সবাই ক্রমান্বয়ে বীমা সুবিধার আওতায় আসবেন।

chardike-ad

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় যেভাবে পরিকল্পনা করেছে তাতে বলা হয়েছে, ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সী যেকোনো কর্মীকে বিদেশে যাওয়ার আগেই বীমা করতে হবে। বিদেশে মৃত্যু বা শারীরিক অক্ষমতা দেখা দিলে ক্ষতিগ্রস্তরা বীমা সুবিধার আওতায় ২ লাখ টাকা বীমা দাবি পাবেন। এক্ষেত্রে বীমা প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৯০ টাকা, যার ৫০০ টাকা কর্মীদের পক্ষে পরিশোধ করবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। আর প্রিমিয়ামের বাকি ৪৯০ টাকা দিতে হবে বিদেশগামী কর্মীদের। বীমার মেয়াদ দুই বছর, তবে এ বীমা নবায়নের সুযোগ রয়েছে প্রবাসী কর্মীদের।

বাধ্যতামূলকভাবে দুই বছর মেয়াদি এ বীমা সুবিধার বাইরে বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মীদের জন্য পাঁচ লাখ টাকার আরেকটি বীমা সুবিধার সুযোগ দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দুই বছর মেয়াদি এ বীমা করলে প্রবাসে যাওয়ার পর কেউ মারা গেলে বা শারীরিক অক্ষমতা দেখা দিলে তিনি পাঁচ লাখ টাকা পাবেন। এক্ষেত্রে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৪৭৫ টাকা, যার ৫০০ টাকা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে পরিশোধ করা হবে। বাকি ১ হাজার ৯৭৫ টাকা বিদেশগামী কর্মীদের পরিশোধ করতে হবে।

বিদেশগামী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের বীমার আওতায় আনতে ৭ জুলাই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সাধারণ বীমা করপোরেশন সক্ষম বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে প্রবাসী ও বিদেশগামী কর্মীদের এসব বীমা করবে।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে এক বছরের জন্য জীবন বীমা করপোরেশন বীমা পরিকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে। বীমা পরিকল্পটি চালু হওয়ার পর করপোরেশন ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে নয় মাস পর বীমা গ্রহীতার সংখ্যা, বীমা অংক দাবির সংখ্যা, বীমাদাবি নিষ্পত্তির সংখ্যাসহ পুরো ব্যবস্থার কার্যকারিতা পর্যালোচনা করবে। তারপর সব যোগ্য বীমা কোম্পানির জন্য তা উন্মুক্ত করা হবে। বীমার মেয়াদ দুই বছর উত্তীর্ণ হওয়ার পর কর্মীরা স্বউদ্যোগে তার মেয়াদ নবায়ন করতে পারবেন। বীমার মেয়াদ দুই বছর পার হওয়ার পর কোনো কর্মী দেশে ফিরে এলে তিনি কোন পদ্ধতিতে বীমাটি সচল রাখবেন, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য কোনো বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে বিদেশে অবস্থান করা প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে যারা নতুন করে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নির্ধারিত চাঁদা দিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করবেন, তাদের জন্য দুই বছর মেয়াদি ২ লাখ টাকার বীমা বাধ্যতামূলকভাবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বীমা পরিকল্পের প্রিমিয়াম, বীমার অংক ও প্রাপ্য সুবিধাদি নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে কর্মীর ওপর আর্থিক চাপ না পড়ে। কর্মীর অংশীদারিত্বও নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে বীমার প্রতি তার অধিকার ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয়।

সৌজন্যে- বণিক বার্তা