ঐতিহাসিক এবং অবিস্মরণীয় এক ম্যাচ শেষে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক ইংল্যান্ড। মূল ম্যাচ হলো টাই, সুপার ওভারও টাই। শেষ পর্যন্ত বাউন্ডারি ব্যবধানে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ কেন, ক্রিকেটের ইতিহাসেও এমন ম্যাচ আর কখনও দেখা যায়নি।
অবিশ্বাস্য ম্যাচটির পর স্বাভাবিকভাবেই আনন্দ ইংলিশ শিবিরে আর হতাশায় নিমজ্জিত কিউইরা। তবে সাধারণ ক্রিকট সমর্থকদের অনেকেই এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না, কি হয়ে গেলো গতকাল (রোববার) রাতে! এমন শ্বাসরুদ্ধকর একটি ম্যাচের কি আর কখনো দেখা মিলবে?
অবিশ্বাস্য এই ম্যাচটিকে কিন্তু শুরু হয়ে গেছে নতুন বিতর্ক। প্রতিবারের মতো এই ম্যাচটিরও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। ম্যাচের নির্ধারিত ৫০ ওভারে সমাপ্তি এলো না। ফল হলো টাই। এরপর গড়ালো সুপার ওভারে। সেখানেও টাই। কেউ জেতেনি, কেউ হারেনি। তবুও চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। এ নিয়ে এখন ক্রিকেট বিশ্বে পুরোদমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে সবকিছুকে চাপিয়ে উঠে গেছে মহা এক বিতর্ক। যে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে আম্পায়ারের বড় একটি ভুল।
ইংল্যান্ডের ইনিংসের শেষ ৩ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৯ রান। এমন সময় যে কোনোভাবেই হোক, একটা বড় শটের পথ খুঁজছিলেন তখন ক্রিজে থাকা ইংলিশ ব্যাটসম্যান বেন স্টোকস। তবে ব্যর্থ হলেন তিনি। ট্রেন্ট বোল্টের করা চতুর্থ বলটি ডিপ মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে এক রান নিলেন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
ব্যবধান কমানোর জন্য ওই বলে দুই রান নিতে দৌড় দিলেন স্টোকস আর আদিল রশিত। তখন একেবারে বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করেন মার্টিন পাগটিল। স্টোকসকে রান আউট করার জন্য তিনি যে থ্রো করেন, সেটি স্ট্যাম্পেও আঘাত হানলো না, কোনো ফিল্ডারের হাতেও গেলো না।
রান আউট থেকে বাঁচতে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্টোকস, আর ওই সময় বলটি এসে তার ব্যাটে লেগে চলে যায় বাউন্ডারির বাইরে। এক্সট্রা বাউন্ডারি। সঙ্গে দুই ব্যাটসম্যানের দু’বার জায়গা বদল। ফলে এই বলে ৬ রান ঘোষণা করেন অন ফিল্ড আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। যে বল থেকে সর্বোচ্চ রান হয় ২, সেখানে হলো ৬। ছক্কা না মেরেও ৬ রান উপহার পেয়ে গেলো ইংল্যান্ড। যার কল্যাণে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ টাই করে ফেলে ইংল্যান্ড।
বিতর্ক তৈরি হয়েছে এই ৬ রান দেয়া নিয়েই। বিতর্কের বিষয়, তখন ইংল্যান্ড কি ৫ রান পেতো নাকি ৬ রান পেতো? নিয়ম অনুযায়ী ওই বলে পাঁচ রান পাওয়ার কথা ইংল্যান্ডের। কেননা, বল ব্যাটের লাগার সময় স্টোকস পুরোপুরি বাইশ গজ অতিক্রম করতে পারেননি; কিন্তু আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনার ভুলে এক রান বোনাস হিসেবে পেয়ে যায় ইংলিশরা!
আইসিসির ১৯.৮ ধারার আইনে লেখা আছে, যদি ওভার থ্রোর কারণে কোনো বল বাউন্ডারি অতিক্রম করে। তাহলে সেই রান যোগ হওয়ার পাশাপাশি ব্যাটসম্যানরা কতবার ক্রিজ অতিক্রম করেছেন সেটাও রান হিসেবে যোগ হবে।
কুমার ধর্মসেনা সিদ্ধান্তটি যে ভুল ছিল সেটা চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে আইসিসির সাবেক বর্ষসেরা আম্পায়ার সাইমন টাফেল। তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডকে ৫ রান দেওয়া উচিত ছিল, ৬ রান নয়। এটা পরিষ্কার ভুল। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হয়েছে। হিট অফ দ্য মোমেন্টে তারা মনে করেছিলেন, থ্রোয়ের সময় ব্যাটসম্যান একে অন্যকে অতিক্রম করেছে; কিন্তু টিভির রিপ্লেতে তার উল্টোটাই দেখা গিয়েছে।’
দুর্ভাগ্য নিউজিল্যান্ডের। আম্পায়ারের ভুলে ১ রান বেশি দেয়া হলো ইংল্যান্ডকে। গুরুত্বপূর্ণ ওই সময়টাতে ফিল্ড আম্পায়ার ধর্মসেনা টিভি আম্পায়ারেরও সাহায্য নেননি কিংবা কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনও এটা নিয়ে কোনো আর্গুমেন্ট করেননি আম্পায়ারের কাছে। ওই একটি রান যদি কম দেয়া হতো, তাহলে তো ১ রানেই জিতে যায় নিউজিল্যান্ড। সুতরাং, ম্যাচটা আর সুপার ওভারেই গড়ানো লাগতো না। এমনকি বাউন্ডারি ব্যবধানের বিষয়টাও সামনে আসতো না।