সৌদি আরবের রিয়াদ প্রবাসী গৃহকর্মী বিলকিস বেগমের (৩৩) লাশ পাওয়া গেছে মরুভূমিতে। রিয়াদের নিকটবর্তী পাহাড়ি এলাকার মরুভূমিতে তার লাশ পাওয়া যায়। রোববার সকাল ৯টার দিকে সৌদি প্রবাসী একজন ফোন করে বিলকিসের পরিবারকে জানায়, রিয়াদের নিকটবর্তী পাহাড়ি এলাকার মরুভূমিতে গৃহকর্মী বিলকিসের লাশ পাওয়া গেছে। এ খবরে শোকের মাতম চলছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরি ইউনিয়নের উত্তর লোহাজুরি গ্রামের বিলকিসদের বাড়িতে।
২০/২২ দিন আগে বিলকিস বেগম তার স্বামী নিয়াশা মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় জানিয়েছিলেন, গৃহকর্তা তাকে নানাভাবে নির্যাতন করে। আর আমি যাতে এসব বিষয় কাউকে জানাতে না পারি সেজন্য ফোন নিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন।
তার পরদিন থেকেই বিলকিসের ফোন বন্ধ পাওয়া যাওয়ায় তার সঙ্গে আর স্বামী কিংবা পরিবারের কেউ যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। পরিবারের লোকজন চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে সময় কাটাচ্ছিলেন। এরপর রোববার তার লাশ পাওয়ার কথা জানা গেলে।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে বিলকিস বেগমের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকার্ত এলাকাবাসীর ঢল দেখা গেছে। বিলকিসের ছোট্ট দুটি মেয়ে ও দুটি ছেলে শিশুকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছিল শাশুড়ি ও অন্যান্য স্বজনরা।
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিলকিসের স্বামী নিয়াশা মিয়া জানান, রোববার সকাল ৯টার দিকে একই ইউনিয়নের আতুশাল গ্রামের সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তি তার নিজের গ্রামের সৌদি প্রবাসী আহমেদ মিয়াকে ফোন করে জানান বিলকিস মারা গেছেন। রিয়াদের অদূরে পাহাড়ি মরুভূমি এলাকায় তার লাশ পাওয়া গেছে। এ খবর পাওয়ার পর নিয়াশা মিয়া বিলকিসের গৃহকর্তার ফোনে অসংখ্যবার ফোন করেন। কিন্তু রিং হলেও কেউ ধরছেন না।
এ পরিস্থিতিতে তিনি লোকাল দালাল আলম এবং রিক্রুটিং এজেন্সি ঢাকার সেগুনবাগিচার মেসার্স ঝুমুর ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা রিয়াদে যোগাযোগ করে ঘটনাটি জেনে নিশ্চিত হয়ে জানানোর আশ্বাস দিলেও বিকাল ৫টা পর্যন্ত তা করেনি।
ঝুমুর ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজহারুল ইসলামের মোবাইলে ফোন দিয়ে কথা বলতে চাইলে হাবিবুর রহমান পরিচয় দিয়ে অফিসের এক ব্যক্তি জানান, বিলকিস মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে তাদের পক্ষ থেকে রিয়াদে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকায় অবস্থানরত এ কোম্পানির এজেন্ট এক সৌদি নাগরিককেও এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানাতে খবর দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পরিবারের অভাব ঘুচাতে চার মাস আগে স্থানীয় দালাল দক্ষিণ লোহাজুরির বড় বাড়ির হাছেন বেপারির ছেলে আলম মিয়াকে ধরে ওই রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ করতে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিলেন কৃষি শ্রমিক নিয়াশা মিয়ার স্ত্রী বিলকিস বেগম। ওই দালাল আলমের হাত ধরে একই রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কিছুদিনের ব্যবধানে এ গ্রামের বিভিন্ন বয়সের ১২ নারী কর্মী সোদি আরব পাড়ি জমান।
এদের মধ্যে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মৃত রহমত আলীর মেয়ে জোহরা বেগম (২৫) ও আকাশ মিয়ার স্ত্রী বিলকিস আক্তার (৩৫) দেড় মাসের মাথায় গুরুতর মরণব্যাধিতে আক্রান্ত থাকার কৌশল প্রয়োগ করে দেশে ফিরে এসেছেন।
এ গ্রামের রেনু মিয়া জানান,তার স্ত্রী জোৎস্না বেগমও অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে রিয়াদে বন্দিদশায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে তার সঙ্গে আর ফোনে যোগাযোগ করা না যাওয়ায় তিনি গরু বিক্রি করে দালালকে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন তার স্ত্রী জোৎস্না বেগমকে ফিরিয়ে আনার জন্য।
এ রকম নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনায় দৃশ্যতঃ উত্তর লোহাজুরি গ্রাম জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। গৃহকর্তাদের অমানুষিক নির্যাতন এবং কাজে বাধ্য করতে দালালদের টর্চার সেল দারিদ্র্য ঘুচিয়ে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্নে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, সৌদি প্রবাসী এসব গৃহকর্মীর স্বজনরা বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছেন দুর্ভাবনায়। তারা এখন তাদের স্ত্রী, কন্যা ও বোনকে নির্বিঘ্নে দেশে ফিরিয়ে আনতে চান।