অভাবের তাড়নায় পাঁচ মাসের ছেলে সন্তানকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন এক মা। তবে ওই মায়ের ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা। বাকি ৩০ হাজার টাকা চলে গেছে স্থানীয় দুই ব্যক্তির পকেটে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের বানারীপাড়া পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খাদেমের সমিল সংলগ্ন এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, খাদেমের সমিল সংলগ্ন এলাকার পারভীন বেগমের সঙ্গে কয়েক বছর আগে একই এলাকার দিনমজুর মো. নুরুজ্জামানের বিয়ে হয়। পারভীন বেগম অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে নুরুজ্জামান তাকে ফেলে চলে যান। নিরুপায় হয়ে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেন পারভীন বেগম। পাঁচ মাস আগে পারভীন বেগম একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান জন্মের পর অভাবে বেকায়দায় পড়েন পারভীন বেগম। অভাবের কারণে সন্তানের ভরণ-পোষণ করতে না পেরে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতেন তিনি। কিন্তু তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করেনি কেউ।
দারিদ্র্য আর অসহায়ত্বের কাছে হার মেনে নিজের দুধের সন্তানটি বিক্রির জন্য বিভিন্ন মানুষের দারস্থ হন। সন্তান বিক্রির কথা শুনে একই এলাকার বাসিন্দা কাছেম মোল্লার ছেলে আনোয়ার মোল্লা পারভীনের কাছে যান। সেই সঙ্গে আনোয়ার মোল্লার সহযোগী উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের আহমদাবাদ বেতাল গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মো. সালেক পারভীন বেগমকে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রলোভন দেখান।
তাদের দেখানো অর্থের প্রলোভনে পড়ে কয়েক দিন আগে পারভীন তার দুধের সন্তানটিকে আহমাদাবাদ বেতাল ক্লাব সংলগ্ন ফরাজি বাড়ির প্রবাসী গাফ্ফার ফরাজীর নিঃসন্তান স্ত্রী নাছরিন আক্তারের কাছে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
৭০ হাজার টাকা সন্তান বিক্রি করলেও পারভীন বেগমের হাতে ৪০ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন আনোয়ার মোল্লা ও তার সহযোগী সালেক। বাকি ৩০ হাজার টাকা আনোয়ার মোল্লা ও তার সহযোগী সালেক ভাগ করে নেন। একই সঙ্গে সন্তান বিক্রির বিষয়টি পাকাপোক্ত করতে নাছরিন আক্তারের পক্ষে পারভীন বেগমকে আদালতে নিয়ে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন তারা।
এ প্রসঙ্গে প্রবাসীর স্ত্রী নাছরিন আক্তার বলেন, পারভীন ভিক্ষাবৃত্তি করে সন্তানের ভরণ-পোষণের খরচ জোগাড় করতে পারছিলেন না। এ কারণে শিশুটির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছি। পাশাপাশি পারভীন বেগম যাতে সচ্ছলভাবে চলতে পারেন সেজন্য স্থানীয় আনোয়ার ও সালেকের মাধ্যমে তাকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি। সব মিলিয়ে পারভীনের সন্তানের পেছনে আমার ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ব্যাপারে মো. সালেক বলেন, নাছরিন আক্তারের সন্তান নেই। পাশাপাশি পারভীন বেগম তার সন্তানের ভরণ-পোষণের খরচ চালাতে পারছিলেন না। এ কারণে পারভীন বেগমের সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন নাছরিন আক্তার। এখানে দোষের কিছু তো দেখছি না।
পারভীনের সন্তান বিক্রির ৩০ হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে সালেক বলেন, এলাকার লোক বিভিন্ন কথা রটাচ্ছে। ঘটনার সময় আমি সামনে ছিলাম। টাকা আত্মসাতের প্রশ্নই ওঠে না।
এদিকে পারভীন বেগম সন্তান বিক্রির পর ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। দুধের সন্তানকে ফিরে পেতে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন তিনি। জানতে চাইলে পারভীন বেগম বলেন, কয়েক দিন আগে আনোয়ার হোসেন ও সালেক বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমার বুকের ধনকে বিক্রি করে দেয়। এরপর আমাকে ৪০ হাজার টাকা দেয় তারা। এখন আমি কার কাছে যাব, কি করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি আমার সন্তানকে চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বানারীপাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. খলিলুর রহমান বলেন, সন্তান বিক্রির কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ