নতুন শ্রমবাজার তো খুলছেই না, বরং একের পর এক বন্ধ হচ্ছে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির পথ। আরব আমিরাত, কুয়েত, ইরাক, লিবিয়াসহ কয়েকটি দেশে জনশক্তির বাজারের পর এবার বাহরাইনের শ্রমবাজারেও কালো মেঘ। গত বছর থেকে কার্যত বন্ধ হয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনের শ্রমবাজার। নতুন শ্রমিক নেয়ার পরিবর্তে গত বছরের আগস্ট থেকে কমপক্ষে তিন হাজার ৭৬৬ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে দেশে পাঠিয়েছে বাহরাইন সরকার। মানামায় বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ আগস্ট এক বাংলাদেশি বাহরাইনের একজন ইমামকে হত্যার পর এই সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার। মসজিদের ভেতরে ওই ইমামকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত বাংলাদেশিকে মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়েছে। এই একজনের অপরাধে ভুগতে হচ্ছে হাজার হাজার বাংলাদেশিকে।
গত বছরের আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন কোনো ভিসাও দিচ্ছে না দেশটি। শ্রমিকদের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে ব্যবসায়িক ভিসাও। ফলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও খুলছে না এই জট। তবে বাংলাদেশ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র।
বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর শেখ তাহিদুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনার পর ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত তিন হাজার ৭৬৬ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে বাহরাইন থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, কিছু বাংলাদেশির অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে বাহরাইন সরকার। এটা বাংলাদেশির জন্য উদ্বেগের বিষয়। জনশক্তি ব্যুরো, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মতে, ১৯৭৬ সাল থেকে চার লাখেরও বেশি শ্রমিক বাহরাইনে গেছে। তবে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে আমরা দেশটির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি বলে জানান এই কূটনীতিক।
বাংলাদেশিদের অপরাধের জন্য পুরো শ্রমবাজার সংকটে পড়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কুয়েতেও একই কারণে শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। কুয়েতের বাজার উন্মুক্ত হলেও শ্রমিকদের অপরাধ প্রবণতার কারণ দেখিয়ে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ আছে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির দ্বিতীয় বৃহৎ বাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ব্র্যাকের অভিবাসন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, বাংলাদেশিদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে এর আগেও কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত বন্ধ হয়েছে। এমনকি সৌদি আরবের শ্রম বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো কর্মীকে বিদেশ পাঠানোর আগে সে দেশের আইনকানুন, রীতিনীতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ব্রিফিং দিতে হবে। সেখানে যাওয়ার পরে যেসব শ্রমিকেরা ছোটখাটো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তাদের তালিকা দূতাবাসের কাছে থাকলে দেশে ফিরিয়ে এনে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
শরিফুল হাসান বলেন, বাহরাইন ছোট্ট একটি দেশ হলেও গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সেরা পাঁচটি শ্রমবাজারের অন্যতম হয়ে উঠেছিল। সে বাজারটি যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য আমাদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, অপরাধী সবদেশেই আছে। একজন শ্রমিক অপরাধী বলে বাংলাদেশের লাখ লাখ শ্রমিক অপরাধপ্রবণ, এটা সত্য নয়। এই সত্যিটা বাহরাইনের সরকাকে বোঝাতে হবে। এজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসবে।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ