মুক্তিপণ দিয়েও মুক্তি মেলেনি এক বাংলাদেশির। প্রায় তিন মাস পার হলেও খোজঁ মেলেনি নেত্রকোনার আল মামুনের। গত ৬ এপ্রিল মালয়েশিয়ায় নিজ কর্মস্থলের সামনে থেকে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টায় দুর্বৃত্তরা তাকে তুলে নিয়ে যায়।
দুদিন পর ৮ এপ্রিল মামুনের মালয়েশিয়ার ফোন নম্বর থেকে দেশে থাকা স্ত্রীর ফোনে কল করে আট লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। মামুনের স্বজনদের অভিযোগ, এ ঘটনার সঙ্গে বিদেশি ও এক বাংলাদেশি নাগরিক জড়িত। বাংলাদেশি ওই নাগরিকই ফোনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে টাকা চেয়ে যোগাযোগ করত। মামুনের অবস্থাও তিনি ফোনে জানাতেন। শেকলে পা বাঁধা অবস্থায় মামুনের একটি ছবি প্রমাণ হিসেবেও পরিবারের কাছে পাঠায় অপহরণকারীরা। স্বজনদের ধারণা, ওই বাঙালি ব্যক্তিও অপহরণের সঙ্গে জড়িত।
মামুনের ছেলে নাফিদুল ইসলাম ইমন মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার বাবার সঙ্গে কথা হতো তারই (প্রবাসী ওই বাঙ্গালি) মোবাইল নম্বরে। সেই নম্বর থেকে ফোন করে তিনি টাকা চান। অনেক কষ্ট করে আমাদের নিকটাত্মীয় আনোয়ারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সেদেশে সাড়ে তিন লাখ টাকা পাঠায়। পরে আনোয়ার আরেকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অপহরণকারীদের টাকাটা দিয়ে দেয়।’
ইমন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি সেই লোকটি বলেছিল, টাকা পাওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে বাবাকে তারা ছেড়ে দেবে। কিন্তু টাকা পাঠান হলেও তারা বাবাকে মুক্তি দেয়নি। গত আড়াই মাস ধরে বাবার কোনো খোঁজ নেই। এমনকি তার মোবাইল ফোনও (বাংলাদেশি) বন্ধ রয়েছে।’
ইমন বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। এই প্রথম ঈদের সময় (ঈদুল ফিতর) বাবার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। উনি বেঁচে আছেন, নাকি অপহরণকারীরা তাকে মেরে ফেলেছে, কিছুই জানি না। যদি মেরে ফেলে, তাহলে অন্তত বাবার লাশটা একবার দেখার পর দাফন করতে চাই।’
১২ বছর আগে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এসটিএস কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে কাজের উদ্দেশে যান নেত্রকোনার আল মামুন। কাজ তার ভালোই চলছিল, কিন্তু বিপত্তি ঘটে গত এপ্রিলে। কর্মস্থলের সামনে থেকে দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর দেশে থাকা মামুনের পরিবারের কাছে আট লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। স্বজনরা সাড়ে তিন লাখ টাকা জোগাড় করে আত্মীয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাঠায়। কিন্তু টাকা পাওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে ছেড়ে দেয়ার কথা থাকলেও গত তিন মাস ধরে মামুনের কোনো খোঁজ পাচ্ছে না তার পরিবার। মামুনের পরিবারের অনুরোধ, যদি তার লাশও পাওয়া যায়, সেটা যেন সরকার দেশে এনে দাফনের ব্যবস্থা করে।
এদিকে, স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য সহায়তা চেয়ে গত ২৫ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেন মামুনের স্ত্রী পারুল আক্তার। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার স্বামী আল মামুন (পাসপোর্ট নম্বর- বি জে ০৬৫৩৮৩৯) ২০০৭ সালে বৈধভাবে মালয়েশিয়া যান। দীর্ঘদিন যাবত তিনি মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে অবস্থান করছেন। হঠাৎ করে কে বা কারা তাকে তার কর্মস্থলের সামনে থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় আনুমানিক ৭টার দিকে আমার স্বামীর নম্বর থেকে কল দিয়ে আট লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।’
‘আমরা সাধ্যানুযায়ী সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাই। এরপর থেকে আমার স্বামীর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমার স্বামীকে অপহরণকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে আপনার সাহায্য কামনা করছি।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছে।
গতকাল বুধবার এ প্রসঙ্গে জানতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (কন্স্যুলার) মো. মাসুদ হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, দূতাবাস থেকে আল মামুনকে উদ্ধারের কাজ চলছে। অপরাধি যেই হউক না কেন দ্রুত ধরা পড়বে বলেও জানান তিনি।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ