সুইডেন দক্ষিণ ইউরোপের সেনজেনভুক্ত ২৬টি দেশের একটি। দেশটির রাজধানী স্টকহোম। দেশটিতে প্রায় ১ কোটি ২ লাখের মতো মানুষ বসবাস করে। দাপ্তরিক ভাষা সুইডিশ। আয়তন প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। মুদ্রার নাম সুইডিশ ক্রোনা। ১ সুইডিশ ক্রোনা বাংলাদেশি ১০ টাকার কাছাকাছি।
শান্তিপ্রিয় ও সুখী জাতি হিসাবে সুইডিশরা অন্যতম। দেশটি প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সুস্বাদু খাবারের জন্য বিখ্যাত। দেশটির প্রায় ৯১ ভাগ মানুষই শিক্ষিত। স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৯৯%। দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা তাদের দেশের নাগরিকদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি।
সুইডিশ হাইয়ার এডুকেশন অথরিটির তথ্যমতে, সুইডেনে আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ৫০ হাজারের কাছাকাছি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রায় ৭-১০ হাজারের মতো নন ইউরোপিয়ান শিক্ষার্থী চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মেক্সিকো, কলম্বো ও বাংলাদেশ থেকে পড়াশোনা করছে। বাংলাদেশ বর্তমানে এশিয়ার মধ্যে সুইডেনে শিক্ষার্থী রফতানিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ভারত ও চীন যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
সুইডেনের শিক্ষা ও ভর্তি পদ্ধতি কিছুটা আলাদা। বছরে ২টি ইনটেক আছে। ২টি ইনটেকে সর্বোচ্চ ৪টি রাউন্ডে ভর্তি নিয়ে থাকে।
১. অটাম (শরৎকালীন সেমিস্টার):
প্রথম রাউন্ড: অটাম ইনটেকের প্রথম রাউন্ড ভর্তি শুরু হয় অক্টোবর-জানুয়ারি মাসে। ভর্তির ফলাফল এপ্রিল মাসে প্রকাশ করা হয়। সেমিস্টার শুরু হয় আগস্ট মাসে।
দ্বিতীয় রাউন্ড: অটাম ইনটেকের দ্বিতীয় রাউন্ড ভর্তি শুরু হয় মার্চ-এপ্রিল মাসে। ভর্তির ফলাফল জুলাই মাসে প্রকাশ করা হয়। সেমিস্টার শুরু হয় আগস্ট মাসে।
২. স্প্রিং (বসন্তকালীন সেমিস্টার): বর্তমানে স্প্রিং ইনটেকের জন্য অ্যাপ্লিকেশন জমা নেওয়া হচ্ছে।
প্রথম রাউন্ড: স্প্রিং ইনটেকের প্রথম রাউন্ড ভর্তি শুরু হবে জুন-আগস্ট মাসে। ভর্তির ফলাফল অক্টোবর মাসে প্রকাশ করা হবে। সেমিস্টার শুরু হবে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে।
দ্বিতীয় রাউন্ড: স্প্রিং ইনটেকের দ্বিতীয় রাউন্ড ভর্তি শুরু হবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। ভর্তির ফলাফল ডিসেম্বর মাসে প্রকাশ করা হবে। সেমিস্টার শুরু হবে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে।
বর্তমানে আবেদন ফি ৯শ’ সুইডিশ ক্রোনা। বাৎসরিক টিউশন ফি প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার সুইডিশ ক্রোনা। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২ লাখের মতো। আর লেটার অব এক্সেপট্যান্স আসার পরই টিউশন ফি দিতে হয়।
২০১৯ সালের নতুন নিয়ম অনুযায়ী থাকা, খাওয়া ও হাতখরচ বাবদ আবেদনকারীর জন্য প্রতি মাসে ৮,৩৭০ ক্রোনা, স্ত্রীর জন্য ৩,৫০০ ক্রোনা এবং বাচ্চাদের জন্য ২,১০০ ক্রোনা দেখানোর সক্ষমতা থাকতে হবে।
যারা আবেদন করতে পারবেন-
১. যাদের ব্যাচেলর ডিগ্রি কমপ্লিট করা আছে।
২. যারা সুইডেনে মাস্টার্স করতে চান (বিবাহিত/অবিবাহিত)।
৩. যাদের আইইএলটিএস করা আছে। কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে আইইএলটিএস ছাড়াও ভর্তি হওয়া যায়।
রেসিডেন্স পার্মিট পাওয়ার শর্তাবলী-
১. ফুল টাইম শিক্ষার্থী হতে হবে।
২. আর্থিক সক্ষমতা থাকতে হবে।
৩. ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স থাকতে হবে।
সুইডেনে পড়াশোনার বিশেষ সুবিধার দিক হলো- শিক্ষার্থীদের সাথে স্ত্রী বা স্বামী ও সন্তানরা যেতে পারবেন। পড়াশোনার মেয়াদ যদি ৬ মাসের বেশি হয়, তবে শিক্ষার্থীর স্বামী বা স্ত্রী রেসিডেন্স পার্মিট ও ওয়ার্ক পার্মিট পাবেন। পড়াশোনা শেষে এমপ্লয়েমেন্ট রেসিডেন্স পার্মিট বা বিজনেস রেসিডেন্স পার্মিট পাবে। পরিশেষে সুইডেনের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সিলেকশন প্রসেস
মেধার ভিত্তিতে সিলেকশন প্রসেস তৈরি করা হয়। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে যদি শিক্ষার্থীর আইইএলটিএস স্কোর ৬ হয়, তাহলে ভর্তি ও ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন জটিলতা থাকে না। সুইডেনে কাজ পাওয়া খুব কঠিন নয়। সেখানে শ্রমমানও ভালো। একজন বৈধ ওয়ার্ক পার্মিট হোল্ডারকে ঘণ্টাপ্রতি ১৭৮ সুইডিশ ক্রোনা দেওয়া হয়।
কেন সুইডেনে পড়াশোনা করবেন
১. সুইডেন পৃথিবীর ১৮তম শান্তিপূর্ণ দেশ।
২. দেশটির ৮৬% মানুষ ইংরেজিতে কথা বলে।
৩. স্টকহোম বিজনেসের জন্য ইউরোপের দ্বিতীয় বেস্ট ইউরোপীয়ান সিটি।
৪. বিশ্বের বিখ্যাত ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় দেশটিতে আছে। যথা- লুন্ড ইউনিভার্সিটি, কেটিএইচ রয়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, উপসালা ইউনিভার্সিটি, চালমার্স ইউনিভার্সিটি এবং স্টকহোম ইউনিভার্সিটি।
৫. শিক্ষাবান্ধব ৫টি বৃহত্তম নগরী। যথা- স্টকহোম, গোথেনবুর্গ, লুন্ড, উপসালা ও উমে।
৬. বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নত দেশ।
লেখক- আবু তালহা