২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পাস করেছে জাতীয় সংসদ। রোববার (৩০ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এটি পাসের সুপারিশ করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এরপর সংসদ সদস্যরা অনেকক্ষণ ধরে টেবিল চাপড়ে স্বাগত জানান। পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার এ বাজেট বর্তমান অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১১তম বাজেট এটি।
জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয় রোববার সকাল ১০টায়। এরপর বাজেটের ওপর আলোচনায় বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা ৫২০টি ছাঁটাই প্রস্তাব এবং ৫৯টি দাবি উত্থাপন করেন।
গত ১৩ জুন সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর মোট ২৫৫ সংসদ সদস্য ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে ৫১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট বক্তব্য রাখেন। সরকারি দলের সদস্যদের কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়।
রোববার দুপুরে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নির্দিষ্টকরণ, ২০১৯ নামে বিলটি উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। আগামীকাল সোমবার (১ জুলাই) থেকে নতুন এ বাজেট কার্যকর হবে।
এর আগে ভ্যাট ও পুঁজিবাজারে আংশিক ছাড় দিয়ে জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০১৯ পাস হয়। গতকাল শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে এটি পাস হয়। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে আরোপিত করের মধ্যে যেসব খাতে ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ছাড় চেয়েছিলেন সেসব খাতে কোনো ছাড় মেলেনি।
সামান্য কিছু সংশোধন করে প্রস্তাবিত অর্থবিলই পাস হয়েছে। অধিকাংশ খাতেই প্রস্তাবিত করের হার বহাল রাখা হয়েছে। ফলে বাড়তি করের চাপে পড়তে হবে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের। এ চাপে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। আগামী এক বছর জনগণকে এসব বহন করতে হবে।
পাস হওয়া বাজেটে কৃষক, ব্যবসায়ী, তরুণ, নারী উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের জন্য সুখবর রয়েছে। আবার অনেকের জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ। একনজরে দেখে নেয়া যাক ২০১৯–২০ অর্থবছরের বাজেটে জানগণ কী পেল-
সবার জন্য পেনশনের প্রতিশ্রুতিঃ উন্নত বিশ্বের মতো সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষের জন্যও পেনশন চালুর প্রতিশ্রুতি রাখা হয়েছে পাস হওয়া বাজেটে। বাজেট উত্থাপনের সময় বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। অবশ্য চলতি অর্থবছরের বাজেটেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু সেটি এখনও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এটি প্রণয়ন করতে আরও তিন-চার বছর সময় লাগবে।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, সরকারি পেনশনাররা দেশের পুরো জনগণের একটি ভগ্নাংশ মাত্র। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতসহ দেশের জনগণের জন্য একটি সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে চালুর লক্ষ্যে একটি ‘ইউনিভার্সেল পেনশন অথরিটি’ শিগগিরই গঠন করা হবে।
বেকার তরুণদের জন্য সুখবরঃ শিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য সুখবর রয়েছে নতুন বাজেটে। তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তরুণরা যাতে সহজে ব্যবসা শুরু করে স্বাবলম্বী হতে পারে, সেজন্য আলাদা একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে এবারের বাজেটে।
‘স্টার্টআপ ফান্ড’ নামে এতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যেসব যুবক ব্যবসা শুরু করতে চাইবেন, তাদের প্রাথমিক পুঁজি সরবরাহ করা হবে এ তহবিল থেকে। দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের জন্য সবসময় বরাদ্দ দেয়া হলেও বাজেটে তরুণদের জন্য সরাসরি সহায়তার এমন উদ্যোগ এবারই প্রথম।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবিত ফান্ড কীভাবে পরিচালনা হবে, কত টাকা দেয়া হবে, ঋণ হিসেবে দেয়া হবে নাকি অনুদান- এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। ওই নীতিমালার ভিত্তিতে এ সহায়তা দেয়া হবে। বাজেট পাসের পর এটি চূড়ান্ত হবে। প্রাথমিকভাবে আসন্ন বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পরে চাহিদা বাড়লে টাকার অঙ্ক আরও বাড়ানো হবে।
প্রবাসীদের জন্য বীমা সুবিধাঃ দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জীবন বীমা সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে এবারের বাজেটে। এর আওতায় বীমাকারী মৃত্যুবরণ করলে, দুর্ঘটনাজনিত স্থায়ী ও সম্পূর্ণ অক্ষমতা বা পঙ্গুত্ববরণ করলে মূল বীমার শতভাগ পরিশোধের বিধান রাখা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের ভিত্তিতে দাবি পরিশোধের কথাও বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রবাসী কর্মীদের বীমা সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের বীমা সুবিধার প্রয়োজনীয়তা, কর্মীদের আর্থিক সক্ষমতা, কর্মকালীন সম্ভাব্য ঝুঁকিসহ অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয় বিবেচনায় আনা হয়েছে। বীমার প্রকারভেদের ক্ষেত্রে বলা হয়, এ নীতিমালার আওতায় প্রবাসী কর্মীদের জীবন বীমা সুবিধা প্রদান করা হবে।
সাধারণত মৃত্যুর ক্ষেত্রে বীমা সুবিধায় প্রিমিয়াম হার ও বীমা অঙ্ক বীমাগ্রহীতাদের বয়সভেদে পার্থক্য হয়ে থাকে। তবে প্রবাসী কর্মীদের একটি গ্রুপ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে বীমা পরিকল্পনাটি বা পলিসি সহজীকরণের লক্ষ্যে বীমাগ্রহীতাদের বয়স নির্বিশেষে অভিন্ন প্রিমিয়াম হার আরোপ করা হবে।
কৃষকদের জন্য থাকছে শস্যবীমাঃ চরম দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হচ্ছে। কৃষকের জন্য ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে চালু করা হবে শস্যবীমা। প্রাথমিকভাবে বেছে নেয়া হবে একটি জেলা। পরবর্তী সময়ে এটি ছড়িয়ে দেয়া হবে সারাদেশে।
কৃষিযন্ত্রে থাকছে ছাড়ঃ বিভিন্ন ধরনের কৃষিযন্ত্রে স্থানীয় ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া মাড়াইযন্ত্র বা হারভেস্টের কর কমানোর কথা বলা হয়েছে।
রেলে মহাপরিকল্পনাঃ রেলের আগের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে এবারের বাজেটে বরাদ্দ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
পুঁজিবাজারে রিটেইনড আর্নিংয়ের কর এ সংশোধনঃ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যে পরিমাণ বোনাস শেয়ার বা স্টক ডিভিডেন্ড দেবে, একই পরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। এক্ষেত্রে বোনাস লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি দেয়া হয়; সেক্ষেত্রে সকল বোনাস লভ্যাংশে ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এটি ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল।
পাস হওয়া অর্থবিলে আরও বলা হয়, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানি পরবর্তী নিট লাভের ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিংস, রিজার্ভসহ বিভিন্ন খাতে স্থানান্তর করতে পারবে। বাকি ৩০ শতাংশ বোনাস ও নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে প্রতি বছর রিটেইন আর্নিংস ও রিজার্ভসহ স্থানান্তর মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর বাড়লঃ বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সবধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। বর্ধিত ওই কর আরোপের প্রস্তাব নিয়ে বেশ সমালোচনাও হয়।
বলা হয়, এ কর বৃদ্ধি সমাজের মধ্যবিত্ত, অবসরভোগী ও ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের আয়ের ওপর সরাসরি আঘাত করবে। এমনকি সংসদে এ নিয়ে বিরূপ সমালোচনা হয়। এরই প্রেক্ষাপটে সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি পত্যাহার হয়নি।
সূত্র জানায়, পারিবারিক সঞ্চয়পত্র শুধু নারীরা ক্রয় করতে পারেন। পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন অবসরভোগী চাকরিজীবীরা। বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, অবসরপ্রাপ্ত একজন অবসরভোগী পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সর্বাধিক ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ বা ক্রয় করতে পারেন। বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, ৫ শতাংশ কর কর্তনের পর ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগের ওপর বার্ষিক মুনাফা দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা। উৎসে কর ৫ থেকে ১০ শতাংশ কর্তন হলে তা কমে দাঁড়াবে পাঁচ লাখ ২৯ হাজার ২০০ টাকা। অর্থাৎ অবসরভোগী বার্ষিক ২৯ হাজার ৪০০ টাকা কম মুনাফা পাবেন।
বিদ্যুৎ–সংযোগ থাকলেই টিআইএন সার্টিফিকেটঃ সাধারণ মানুষকে করের আওতায় আনতে এবার বাজেটে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে এ বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন বাধ্যতামূলকের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সংশোধনী আনা হয়নি। গত ১৩ জুন প্রস্তাবিত বাজেটের প্রস্তাবই বহাল রাখা হয়েছে পাস হওয়া অর্থবিলে।
এ বিষয়ে গত সোমবার (২৪ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে লেখা আধাসরকারি চিঠিতে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ইতোমধ্যে ৯৩ ভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা সারাদেশে তিন কোটি ৩৪ লাখ। এর মধ্যে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গ্রাহক সংখ্যা দুই কোটি ৬৪ লাখ। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এসব গ্রাহকের মধ্যে এক কোটি ২০ লাখ লাইফ লাইন গ্রাহক। অর্থাৎ এসব গ্রাহক মাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন।
এতে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থবিলে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেই কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে। কিন্তু লাইন লাইফ গ্রাহকরা খুবই দরিদ্র। অনেকেই দিনমজুর। তাদের পক্ষে টিআইএন করা কষ্টদায়ক ও অমানবিক। এছাড়া টিআইএন থাকলে প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। যা ওই দরিদ্র শ্রেণির লোকদের জন্য হয়রানিমূলক, কর্মকালের অপচয় এবং তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করি।
চিঠিতে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন থাকার প্রস্তাব প্রত্যাহারের জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাস হওয়া বাজেটে সে অনুরোধ রাখা হয়নি।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগঃ সংশোধিত অর্থবিলের মাধ্যমে কালো টাকায় জমি কিনে সাদা করার সুযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক, ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট ও জমি কেনা এবং ভবন নির্মাণে কালো টাকা বিনিয়োগ করে সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। আগে থেকেই নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল।
অর্থবিল পাস হওয়ার পর এখন তিনভাবে কালো টাকা সাদা করা যাবে। প্রথমত, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে। দ্বিতীয়ত, এলাকাভেদে নির্দিষ্ট অঙ্কের কর দিয়ে ফ্ল্যাট কিনলে। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক বিনিয়োগের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ অর্থের ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এ তিন পদ্ধতিতে কালো টাকা সাদা করলে পরবর্তীতে এনবিআর অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করবে না।
প্রবাসীদের জন্য সুখবরঃ পাস হওয়া বাজেটে প্রবাসীদের জন্য সুখবর রয়েছে। তারা তাদের পাঠানো আয়ে ২ শতাংশ হারে ভর্তুকি পাবেন। এজন্য তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
কমছে গরু-মুরগি-মাছের খাবার উপকরণের মূল্যঃ গবাদিপশু, মুরগি পালন ও মাছ চাষের কয়েকটি উপকরণে শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। ফলে খামারিরা কিছুটা কম দামে এসব উপকরণ পেতে পারেন।
করমুক্ত আয়সীমা একইঃ ধনীদের সারচার্জের সীমায় ছাড় দিলেও করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকাই রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। বিগত কয়েক বছরের মতো এ বছরও এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি।
ক্যানসারের ওষুধে দাম কমছেঃ ক্যানসারের ওষুধ তৈরিতে কাঁচামালের ওপর আরও শুল্কছাড় দেয়া হয়েছে। এতে ক্যানসার ওষুদের দাম কমতে পারে।
কর্পোরেট করে ছাড় নেইঃ যেসব খাতে ব্যবসায়ীরা উচ্চ হারে আয়কর দেন, সেখানে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি। তবে পোশাক খাতে ছাড় দিয়ে ১২ শতাংশ কর্পোরেট কর বহাল রাখা হয়েছে।
বাড়ছে বিড়ি-সিগারেটের দামঃ বিড়ি-সিগারেট, তামাক ও জর্দার দাম বাড়ছে। বাজেটে এক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে।
ফ্রিজে কমবে, বাড়বে ওভেনের দামঃ দেশীয় উৎপাদকরা যে ফ্রিজ তৈরি করেন তার উপকরণ আমদানিতে করছাড় দিয়েছে সরকার। তবে বাড়বে ওভেনের দাম।
গাড়ি ব্যবহারে ব্যয় বাড়বেঃ ব্যক্তিগত সব গাড়ি নিবন্ধন, রুট পারমিট, ফিটনেস, মালিকানা সনদ নেয়া এবং নবায়ন মাশুলের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে গাড়ি ব্যবহারের ব্যয় বাড়বে।
বিদেশি টায়ারের দাম বাড়বেঃ মোটরসাইকেলের জন্য আমদানি করা বিদেশি টায়ারের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। এতে টায়ারের দাম বাড়বে।
আরও সুবিধার আওতায় পোশাক শিল্পঃ এবারের বাজেটে পোশাক খাতে আরও সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ খাতে ১ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার। এজন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার ৮২৫ কোটি টাকা।
হোটেল সেবায় ব্যয় বাড়ছেঃ হোটেলে রাতযাপনে ভাড়ার ওপর উৎসে কর আরোপ হয়েছে। এতে হোটেল সেবার ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে।
ল্যাপটপে কর রেয়াত নেইঃ কম্পিউটার ও ল্যাপটপ কেনার পেছনে বিনিয়োগ দেখিয়ে যে কর রেয়াত মিলত, সেটা আর মিলছে না।
দেশীয় জুতার দাম কমবেঃ দেশে জুতা, স্যান্ডেল তৈরিতে ব্যবহৃত পাঁচটি উপকরণে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক মওকুফ করেছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে দেশীয় পাদুকা শিল্পে উৎপাদন ব্যয় কমতে পারে।
সহজলভ্য হবে অগ্নিনির্বাপণসামগ্রীঃ অগ্নিদুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বাইরে সেবাদানকারী হোটেল, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ক্ষেত্রে রেয়াতি হারে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
ব্র্যান্ডের উপকরণে বাড়তি ব্যয়ঃ ব্র্যান্ডের দোকান থেকে কেনাকাটায় খরচ বাড়ছে। এক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।
কথা বলতে বাড়তি ব্যয়ঃ নতুন বাজেটে মুঠোফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সিম কার্ডের ওপর কর দ্বিগুণ করে ২০০ টাকা নির্ধারণ হয়েছে। সব মিলিয়ে বাড়ল মুঠোফোন কেনা ও কথা বলার খরচ।
স্মার্টফোনের দাম বাড়বেঃ স্মার্টফোনে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দাম ব্যাপক বাড়বে। ফিচার ফোনের কর আগের মতোই থাকবে।
এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চারটি উপকরণে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। সিম খোলার পিনের শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। একই হারে কমানো হয়েছে চার্জার কানেকটর পিনের শুল্ক।
এমপিওভুক্তির সুখবরঃ নয় বছর পর আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলো এমপিওভুক্তির সুখবর দিলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, এজন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সম্পদের ওপর সারচার্জ আরোপঃ ধনীদের সম্পদের ওপর সারচার্জ আরোপ করেছেন অর্থমন্ত্রী। অবশ্য সারচার্জে সম্পদের সীমায় ছাড় দেয়া হয়েছে।
তেল-চিনির দাম বাড়ছেঃ বাড়ছে তেল-চিনির দাম। চিনি আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ভোজ্যতেলে আরোপ করা হয়েছে ভ্যাট।
পাস হওয়া অর্থবিল-বাজেটের বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থবিলের মাধ্যমে বাজেটের আইনি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে যা ছিল, চূড়ান্তভাবেও মোটামুটি তা-ই রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে মধ্যবিত্তের ওপর করের চাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েই গেল।
তিনি বলেন, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। অপরিবর্তিত রয়েছে কর্পোরেট কর। এতে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। মানুষের প্রত্যাশা ছিল এটি কমতে পারে, তা কমেনি; বরং বহাল রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাটের কারণে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়বে। কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্কের প্রভাবে আমদানি ব্যয় বাড়বে। এতে ব্যবসা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে।