Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

atm boothএটিএম বুথে বিশেষ ধরনের কার্ড প্রবেশ করা মাত্র ইচ্ছেমতো টাকা বের হয়। লাগে না কোনো পিন নম্বর। আবার কার্ড প্রবেশ করা মাত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাংকের মূল সার্ভার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সংশ্লিষ্ট বুথের নেটওয়ার্ক সিস্টেম।

এ অভিনব কার্ড আবিষ্কার করে আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপ বুথ থেকে অর্থ চুরি করে আসছে। এক মাসে ১৩০টি দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

chardike-ad

কিন্তু বাংলাদেশে এ অপকর্ম করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে চক্রটি। গত শনিবার ঢাকার খিলগাঁওয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা উত্তোলনের সময় ধরা পড়ে চক্রের দুই সদস্য। পরে অভিযানে চক্রের আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের নাগরিক হ্যাকার গ্রুপের সাত সদস্য বাংলাদেশে আসে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহিদুর রহমান রিপন বলেন, আগের চক্রগুলো কার্ড ক্লোন করে বুথ থেকে টাকা চুরি করত। তবে এ চক্রটি অভিনব কায়দায় বুথ থেকে টাকা চুরি করছে। মেশিনে কার্ড দিয়ে কোনো পিন নম্বর ছাড়াই টাকা উত্তোলন করে তারা। তিনি বলেন, চক্রের সাতজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ড চাওয়া হবে বলেও তিনি জানান। তাদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। এডিসি আরও বলেন, চক্রের পলাতক সদস্য যেন বিমানবন্দর দিয়ে পালাতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি বাংলাদেশে আসার আগে দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে এসেছে। তারা যে কার্ড ব্যবহার করছে, তা আগে কখনও ব্যবহার করা হয়নি। চক্রটি বড় টার্গেট নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল। পান্থপথের হোটেল ওলি ইন্টারন্যাশনালে তারা উঠেছিল। সেখান থেকে প্রথমে তারা বাড্ডা এলাকার একটি বুথ থেকে দুই লাখ টাকা তোলে। টাকা চুরি করার সময় তারা যেহেতু সার্ভার থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নেটওয়ার্ক সিস্টেম বিচ্ছিন্ন করে নেয়, তাই ব্যাংকের সার্ভারে এর কোনো রেকর্ড থাকে না। ব্যাংক বুঝতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে চক্রের সদস্যরা শনিবার খিলগাঁও এলাকার একটি বুথে গিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা উত্তোলন করে। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীর সন্দেহ হওয়ায় তাকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, বুথের সিসি ক্যামেরায় টাকা উত্তোলনের পুরো ঘটনার ফুটেজ রয়েছে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের মুখে মাস্ক ও মাথায় ক্যাপ। বুথে বেশি সময় নেয়ার কারণে নিরাপত্তারক্ষী আশপাশের লোকজন ডেকে জড়ো করেন। বিষয়টি টের পেয়ে দুই বিদেশি নাগরিক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে আটক ব্যক্তির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পান্থপথের ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৫০টির মতো কার্ড ও মুখোশ, মাস্ক, মোবাইল ফোন সেট ও আইপ্যাড উদ্ধার করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তি ইউক্রেনের নাগরিক। তারা ইংরেজি ভাষা জানলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইংরেজি বলছে না। ভাষাগত জটিলতার কারণে দোভাষী এনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, টাকা উত্তোলনের জন্য চক্রটি এমন কার্ড তৈরি করেছে যে ধরনের কার্ড আগে ব্যবহার করা হয়নি। চুরি করতে তারা এ অভিনব কার্ড তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এ ধরনের কার্ড ব্যবহার করে যাতে টাকা উত্তোলন করতে না পারে সে জন্য বুথের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হল : ভ্যালেনটাইন (পাসপোর্ট নম্বর ইওয়াই ০৫১৫৬২), ওলেগ (পাসপোর্ট নম্বর ইএক্স ০৮৯৯৬৩), ড্যানিশ (পাসপোর্ট নম্বর এফএল ০১৯৮৩৪) নাজেরি (পাসপোর্ট নম্বর এফটি ৫০০৫০১), সার্গি (পাসপোর্ট নম্বর এফএইচ ৪২৪৩৯৪) ও ভোলোবিহাইন (পাসপোর্ট এফটি ৩৭৯৯৮৩)।

বিদেশিরা আগেও বাংলাদেশকে টার্গেট করেছিল : এর আগেও বিদেশিরা এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে অর্থ হাতিয়ে নিতে বিশেষ মিশন নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল। ২০১৬ সালের মে মাসে তিন দিনের বিশেষ মিশন নিয়ে আসে তিন চীনা নাগরিক। তাদের মধ্যে জ্যু জিয়ানহুই রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের প্রাইম ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় ধরা পড়ে। নিরাপত্তাকর্মী সন্দেহ করে তাকে পাকড়াও করেছিলেন।

একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় থমাস পিটার নামে এক জার্মানি নাগরিককে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পিটারের পেশাই ছিল এটিএম কার্ড জালিয়াতি। তার সঙ্গে সিটি ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। ওই সময় সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকেও গ্রেফতার করেছিল ডিবি।

সৌজন্যে- যুগান্তর