Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

malaysiaমালয়েশিয়ায় রেমিট্যান্স প্রেরণে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। গত এক মাসে ১৫৮ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ ছাড়া চলতি বছরের গত পাঁচ মাসে মালয়েশিয়া অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউজ থেকে বাংলাদেশিরা পাঠিয়েছেন ২৩০ কোটি ৯০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে ৪২০ কোটি ৬০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন তারা।

চলতি বছরের শুরু থেকে ২ জুন পর্যন্ত বৈধপথে এ পরিমাণ টাকা মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়াস্থ এনবিএল ও অগ্রণী রেমিট্যান্সের সংশ্লিষ্টরা।

chardike-ad

এদিকে প্রবাসীরা বলছেন, অবৈধপথে এর দ্বিগুণ টাকা পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাঙালিরা হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত, যা বাংলাদেশ সরকারের রেমিট্যান্স খাতে কু-প্রভাব পড়ছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি ১টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা থাকার পরেও হুন্ডিকে সঠিক হিসেবে মনে করছে অনেকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ব্যবসার সঙ্গে শতাধিক বাংলাদেশি জড়িত রয়েছে। এদের মধ্যে হুন্ডি ব্যবসার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। এ সিন্ডিকেট প্রতিহত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটি প্রদেশে রয়েছে তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। তারা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকা লেনদেন করে হুন্ডির মাধ্যমে।

বাংলাদেশ দূতাবাস ও রেমিট্যান্স হাউসগুলো বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে সচেতনতামূলক সভা সেমিনার করলেও কে শুনে কার কথা। মালয়েশিয়া থেকে ৭০ শতাংশ প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠায়। ৭০ শতাংশ এর মধ্যে ৪০ শতাংশ অবৈধ এবং ৩০ শতাংশ বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। যারা বৈধপথে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডির পথ বেছে নিয়েছে।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, এ অবৈধরা বৈধ কাগজপত্র না থাকাতে পুলিশের ভয়ে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে দেশে অর্থ প্রেরণ করছেন।

malaysiaমালয়েশিয়াস্থ এনবিএল রেমিট্যান্স হাউসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ আক্তার উদ্দিন আহমেদ রোববার এ প্রতিবেদককে বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২ জুন পর্যন্ত এনবিএলের ৯টি শাখার মাধ্যমে ৪২০ কোটি ৬০ লাখ ৪৫ হাজার টাকার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

তিনি বলেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির লক্ষ্যে এনবিএলের পক্ষ থেকে আমরা সচেতনতামূলক সভা- সেমিনার করে যাচ্ছি। আর এ সচেতনতা বাড়াতে আমাদের হাইকমিশনার মুহা. শহীদুল ইসলাম দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। হাইকমিশনারের দিক-নির্দেশনাই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছিলাম ঈদের বন্ধের সময় বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে শাখা খোলা রাখতে। যাতে করে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা পরিবারের সদস্যরা বন্ধের দিনেও উওোলন করতে পারে। কিন্তু সে অনুরোধ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরা রাখেননি।

এনবিএল রেমিট্যান্স হাউসের এ কর্মকর্তা বলেন, যার কারণে বৈধপথে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে অবৈধ পন্থা হুন্ডির আশ্রয় নিচ্ছে। যদি বন্ধের দিনে ব্যাংক শাখা খোলা রাখা হতো তাহলে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স বৈধপথে দেশে পাঠানো হয়েছে এর তিনগুণ বৃদ্ধি পেত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রবাসীদেরকে বলা হচ্ছে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো নিরাপদ এবং এনবিএলের ৯টি শাখার পাশাপাশি এজেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে যাতে করে এনবিএলের সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।

অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও ডাইরেক্টর খালেদ মোর্শেদ রিজভী বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২ জুন পর্যন্ত অগ্রণী রেমিট্যান্সের ৬টি শাখার মাধ্যমে ২৩০ কোটি ৯০ লাখ ৮৮ হাজার টাকার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

খালেদ মোর্শেদ এ প্রতিবেদককে জানান, বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণে সচেতনতামূলক বিভিন্ন আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে হাই কমিশনার মুহা. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হয়েছে। কিভাবে বৈধপথে দেশে রেমিট্যান্স বাড়ানো যায় হাইকমিশনার দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।

তার আলোকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং অগ্রণী রেমিট্যান্সের ৬টি শাখার পাশাপাশি এজেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। হাইকমিশনার ও অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউসের ডাইরেক্টর দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মো. জহিরু ইসলাম সবসময় রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির খোঁজ-খবর রাখছেন। মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অগ্রণী হাউসের এ কর্মকর্তা।

এদিকে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মাসের ২৪ দিনে (১ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত) ১৩৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে ১ থেকে ৩ মে এসেছে ১১ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। আর ৪ থেকে ১০ মে ৪৯ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ১১ থেকে ১৭ মে ৩৮ কোটি ৯১ লাখ ডলার এবং ১৮ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত ৩৪ কোটি ৯৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, মে মাসের প্রথম ২৪ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ৭৪ লাখ ডলার, বেসরকারি ৪০টি ব্যাংকের মাধ্যমে ১০১ কোটি ৮১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ৯ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

এর আগে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এক হাজার ৩৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার (১৩ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা- যা ছিল গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। মে মাসের ২৪ দিনে ১৩৫ কোটি ডলার যোগ করলে চলতি অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৬৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।

অর্থবছরের বাকি ১ মাস ৬ দিনে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসবে। সে হিসাবেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এবার রেমিট্যান্স ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে।

এদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা- যা ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং হুন্ডি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে ১ কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ