দেশে এখন কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৭৫ হাজার ৫৬৩ জন। এর মধ্যে মহাজোট সরকারের দশ বছরে এ সংখ্যা বেড়েছে ৫৬ হাজার ৪০০ জন। এই দশ বছরে গড়ে প্রতিবছর কোটিপতি বেড়েছে ৫ হাজার ৬৪০ জন। এটা কেবল ব্যাংকে টাকা আমানত রেখেছেন এমন ব্যাক্তিদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। ২০০৮ এর ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আমানতকারীর পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় এই চিত্র উঠে আসে।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের লোকজনের উন্নতি হচ্ছে, তাদের আয় বাড়ছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক। তিনি বলেন, এই অর্থটা পাচার না হয়ে ব্যাংকে জমা হচ্ছে এটা খুবই আশাব্যাঞ্জক।
মির্জ্জা আজিজ আরো বলেন, এটা এও প্রমান করে দেশে আয়ের বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে অর্থাৎ ইন ইক্যুইটি অফ ইনকাম অ্যান্ড ওয়েলথ, বেড়ে যাচ্ছে তাও প্রমান করে। তিনি বলেন, কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়াটা যেমন ইতিবাচক তেমনি আয়ের বৈষম্য বেড়ে যাওয়াটা নেতিবাচক।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে মানে হলো মানুষের আয়ের সুযোগ বাড়ছে। ইট ইজ নট ব্যাড সাইন। দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে এবং মানুষের আয় বাড়ার কারণে এটা হতে পারে। তবে, যে বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে, কারা এত বিত্তের মালিক হচ্ছেন। এর ফলে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে কিনা? এটা নিয়েও গবেষণা হতে পারে।
১০ বছরে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা: ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৬৩ জন। পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে বেড়েছে ৩০ হাজার ৪৭৭ জন। এই সময়ে গড়ে প্রতিবছর কোটিপতি আমানতকারি বেড়েছে ৬ হাজার ৯৫ জন।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটিপতি আমানতকারী বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ হাজার ৫৬৩ জন। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ২৫ হাজার ৯২৩ জন। গড়ে প্রতিবছর কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৫ হাজার ১৮৪ জন। অর্থ্যাৎ মহাজোট সরকারের প্রথম দুই মেয়াদের (২০০৮ থেকে ২০১৮) ১০ বছরে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৫৬ হাজার ৪০০ জন।
১০ বছরে কোটিপতিদের আমানতের পরিমাণ: ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর আমানতের পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। তখন মোট আমানতের ৩১ শতাংশ ছিল কোটিপতি আমানত। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতি আমানতকারীর আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায়, ২ লাখ ৪৭ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। তখন মোট আমানতকারীর ৪০ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল কোটিপতি। অর্থ্যাৎ মহাজোট সরকারের প্রথম পাঁচ বছরে কোটিপতি আমানতের পরিমাণ বাড়ে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর অর্থের পরিমাণ বেড়ে হয় ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। মোট আমানতকারীর ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশ কোটিপতি। ফলে, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের পাঁচ বছরে কোটিপতি আমানতকারীর আমানত বেড়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা।
২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত কোটিপতির সংখ্যা: ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশে কোটিপতি বেড়েছে ১৪ হাজার ১ জন। এই সময়ে গড়ে প্রতিবছর ২ হাজার করে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৮ হাজার ৮৮৭ জন। ওই সময়ে দেশে প্রতিবছর গড়ে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৭৭৭ জন। অন্যদিকে ২০০৭-০৮ এই দুই বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৫ হাজার ১১৪ জন। এই সময়ে বছরে গড়ে কোটিপতি বেড়েছে ২ হাজার ৫৫৭ জন।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে মহাজোট সরকারের প্রধান শরীক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করা হয়। এই সরকার টানা তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম দুই মেয়াদ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করা হয়। তবে, সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়লাভ করে। তবে, নির্বাচনের পর মহাজোটের প্রধান শরীক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা করছেন।
সৌজন্যে- সারাবাংলা