খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে দেয়া তার বক্তব্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন করছেন বলে অভিযোগ বিএনপির। শনিবার (১৮ মে) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার দলের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ তুলে ধরেন।
জমিরুদ্দিন সরকার বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-‘তিনি (বেগম জিয়া) আয়েশ করে পায়েস খাচ্ছেন। তিনি অসুস্থতার নামে নাটক করছেন।’ দেশের একজন বর্ষীয়ান ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদের অসুস্থতা নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের বিদ্রুপ ও রসিকতা করে আসছেন তা নজীরবিহীন। এ ধরনের দৃষ্টান্ত সভ্য দেশ ও সমাজে একেবারেই বিরল। কারাগারের দূষণযুক্ত পরিবেশে তার স্বাস্থ্য, সুস্থতা ও জীবন সবই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বেগম জিয়া এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন-বেগম জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য একজন বন্দির মানবাধিকারকে অবজ্ঞা করার শামিল এবং এই বক্তব্য কেবল প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিষ্ঠুর রসিকতায় একটি স্বৈরাচারী সরকারের ভয়াবহ রূপটিই ফুটে ওঠে।’’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অন্যরা। লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তারা।
‘আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন সম্ভব না। আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করতে হবে’, বারবার এমন বক্তব্য দেয়ার পরও আন্দোলন কর্মসূচিতে যাচ্ছেন না কেন?— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এই দলের পক্ষে আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। আমরা কোনোভাবেই আইনি লঙ্ঘন করতে পারি না। চেষ্টা করছি, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করতে।’
একই প্রশ্ন বারবার করলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং দ্রুত মুক্তির বিষয় নিয়ে এখানে লিখিত বক্তব্য দিয়েছি। আমরা আজ এর মধ্যেই থাকতে চাই। আপনাদের প্রশ্নের জবাব দিতে গেলে আজকের বিষয়টি ডাইভার্ড হয়ে যাবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার বলেন, ‘আদালত স্থানান্তর করে খালেদা জিয়ার বিচার কাজ পরিচালনা করে ঠিক হচ্ছে কি-না, সেটা নিয়ে আমাদের আইনজীবীরা কাজ করছেন। তারাই খতিয়ে দেখবেন বিষয়টির লজিক্যাল দিক আছে কি-না।’
বেগম খালেদা জিয়া স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন না উল্লেখ করে জমির উদ্দিন সরকার তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে এক শোচনীয় পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি বন্দি হওয়ার অনেক আগে থেকেই নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন। একজন বর্ষিয়ান নারীর এই নির্জন মানবেতর কারাবাস স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে তা বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান গুরুতর শারীরিক অসুস্থতায় উপলব্ধি করা যায়।’
‘কারাগারে অবস্থানকালীন তার কক্ষের বাথরুমে তিনি পড়ে গিয়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছেন। নির্জন, নিঃসঙ্গ, নিরাপত্তাহীন পরিবেশের কারণে নিদ্রাহীনতা, উদ্বেগ, বিষণ্নতাসহ মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভবনা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিরূপ, নিপীড়নমূলক পরিবেশ ও অস্বাভাবিক মানসিক চাপের ফলে তার আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মারাত্মক জীবন-বিনাশি জীবানু দ্বারা ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল হয়ে উঠেছে। এ ছাড়াও ধারণা করা হয় যে, কারাগারে থাকার সময় সেখানকার পরিবেশের জন্য ভয়ংকর মাত্রার ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়ামের শূন্যতা দেখা দিয়েছে, যা তার হাড়ের জন্যে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এমনিতেই অনেক আগে থেকেই তিনি বাম কাঁধ ও হাতের ব্যথায় ভুগতেন। এখন সেই ব্যথা ডান কাঁধ ও হাতেও সম্প্রসারিত হয়ে মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। তিনি এখন দুই হাতেই নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছেন’,- জানানো হয় লিখিত বক্তব্যে।
জমির উদ্দিন সরকার বলেন, সর্বশেষ দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা গেছে, ইনসুলিন ব্যবহারের পরেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ তো হচ্ছেই না, বরং তা বিপজ্জনক মাত্রায় অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে তার মুখে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, এই ক্ষতের জন্য মুখে প্রচণ্ড ব্যথার সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে তিনি স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন না, কোনোরকমে জাউ খেয়ে জীবনধারণ করছেন। অথচ সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ও নেতারা বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে যাচ্ছেন, যা শুধু অমানবিকই নয়, নিষ্ঠুর মনুষ্যত্বহীন মনেরও বহিঃপ্রকাশ।