নিরাপদে ইতালি পাঠানোর কথা বলে ৮ লাখ টাকায় চুক্তি করেছিলেন সিলেটের জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনের ইয়াহিয়া ওভারসীজের মালিক এনামুল হক। কিন্তু লিবিয়া থেকে কোনভাবে ইতালি পাঠাতে না পেরে এনাম বেছে নেন অবৈধ মৃত্যুঝুঁকির পথ। আর সেই পথে স্বপ্নের দেশে পাড়ি দিতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে তিউনেসিয়া উপকূলে ট্রলার ডুবিতে মারা যান সিলেট ও মৌলভীবাজারের ৭ জন। যাদেরও অনেকেই চুক্তি করেছিলেন এনামের সাথে। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে তাদের লিবিয়া পাঠান।
নিহত আব্দুল আজিজের বড় ভাই মফিজুর রহমান জানান, সপ্তাহখানেক পূর্বে লিবিয়া থেকে আজিজ আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, তারা নাকি লিবিয়া থেকে বের হতে পারছে না। তাই ইয়াহিয়া ট্র্যাভেলসের মালিক এনাম তাদেরকে ফোন দিয়ে বলেছে ট্রলার দিয়ে সাগর পথে ইতালি যেতে হবে। এনাম দালালের মাধ্যমে আমার ভাইসহ আরো কয়েকজনকে জোরপূর্বক নৌকায় তুলে সাগর পথে ইতালি পাঠাতে চেয়েছিল। তিনি আরো জানান, আমার চাচা বিলাল আহমদ আজিজের সাথে ছিলেন। তিনি বেঁচে আছেন। ট্রলার ডুবির পর উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের সাথে তিনি তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্টে আছেন। তিনি ফোন করে বলেছেন, আমার ভাইসহ আমাদের এলাকার অনেকে মারা গেছেন। নিহত লিটনের বাবা সিরাজ মিয়া বলেন, দালাল এনামকে ফোন দিলে সে রিসিভ করছে না। এখন ফোন বন্ধ করে রেখেছে ও বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট নগরীর রাজা ম্যানশনের ৩য় তলার নিউ ইয়াহিয়া ওভারসীজের মালিক মো. এনামুল হকের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার মেহেরপুর এলাকার পনাইরচক গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত মো. আবদুল খালিকের ছেলে এনাম। ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর মাসিক ৭ হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে রাজা ম্যানশনের ৩য় তলার ১১৭ নম্বর দোকান ভাড়া নেন এনামুল হক। ট্রাভেলস ব্যবসার আড়ালে মূলত মানব পাচারই ছিল তার ব্যবসা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লোভনীয় উপার্জনের স্বপ্ন দেখিয়ে সিলেটের বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি। এরপর দালাল চক্রের মাধ্যমে তাদেরকে বিভিন্ন দেশে পাঠানোর চেষ্টা করতেন।
ভ‚মধ্যসাগরে ট্রলার ডুবিতে এনামের পাঠানো যাত্রীদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজা ম্যানশন মার্কেটে তার পরিচিতি ছিল একজন ভালো ট্রাভেলস ব্যবসায়ী হিসেবে। গত বৃহস্পতিবার ট্রলার ডুবিতে প্রাণহানীর ঘটনার পর ধীরে ধীরে বের হতে থাকে এনামের মানব পাচারের ঘটনা। এনাম যে মানব পাচার চক্রের সাথে জড়িত তা গেলো আড়াই বছরেও জানতে পারেননি দাবি মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুদ আহমদের।
তবে ট্রাভেলসের আড়ালে গোপন ব্যবসার আলামত আগেই পেয়েছিল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব)। তাই তার ট্রাভেলসকে দেয়া হয়নি আটাবের সদস্যপদ। আটকে রাখা হয়েছিল তার আবেদন।
আটাব সিলেট অঞ্চলের সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল জানান, নিউ ইয়াহিয়া ওভারসীজের ব্যবসা নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। তাই আবেদনের পরও তাকে আটাবের সদস্যপদ দেয়া হয়নি। তার কার্যক্রম আমরা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। এর মধ্যেই তার মানব পাচারের বিষয়টি ধরা পড়লো। এ রকম আরও যেসব অবৈধ ট্রাভেলস ব্যবসায়ী মানব পাচারের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
এদিকে, ট্রলার ডুবিতে মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে নিউ ইয়াহিয়া ওভারসিজে তালা ঝুলিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে এনামুল হক। রাজা ম্যানশনের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেছে দোকানে তালা ঝুলছে। ট্রাভেলসের সাইনবোর্ডে লেখা দুটো ফোন নাম্বারই বন্ধ। এনামের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটিও ছিল বন্ধ।
সৌজন্যে- দৈনিক ইনকিলাব