সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়ি গ্রামে মালয়শিয়া প্রবাসী এক গৃহবধূকে অপহরণ করে তিন ধর্ষক ধর্ষণ করে। এ ঘটনার ফলস্বরূপ ওই নারী সন্তান প্রসব করেছেন। তাতে এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ফুটফুটে সন্তানটি কার পরিচয়ে বেড়ে উঠবে এ নিয়ে অসহায় ঐ নারীসহ এলাকাবাসী দুশ্চিন্তায়।
এদিকে ধর্ষণের বিষয়টি উপযুক্ত বিচারের কথা বলে ঝুলিয়ে রাখার ৮ মাস পর দায়ের করা মামলাটি আইনের বিধান মতে না হওয়ায় তা খারিজ হয়। এরপর ২ সন্তানের জননী গৃহবধূ সন্তানটি প্রসব করে। তবে থানা পুলিশ জানিয়েছে অভিযোগ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার শিকার ওই গৃহবধূ ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, তার স্বামী গত আড়াই বছর আগে ২ শিশু সন্তান ও তার স্ত্রীকে রেখে মালেশিয়ায় কাজে যান। এই সুযোগে তার বাড়ির পাশের আফজাল ফকিরের ছেলে লিটন ফকির, মৃত আফছার প্রামানিকের ছেলে ইয়াসিন আলী এবং মৃত রহমান ফকিরের ছেলে স্বপন ফকির তাকে উত্যক্ত এবং খারাপ অঙ্গভঙ্গি করতো। বিষয়টি নিয়ে তার পরিবারের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি।
এক পর্যায়ে গত বছরের ৩০ আগস্ট রাতে ঘর থেকে বের হলে লিটন, ইয়াসিন ও স্বপন ফকির তাকে নৌকায় তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর তারা বাড়িতে রেখে যায়। বিষয়টি কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর ওই নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। বিষয়টি তাদের অভিভাবক ও স্থানীয় মাতব্বরদের জানালে তারা গ্রাম্য সালিশ করে সুরাহা করে দেওয়ার কথা জানিয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষেপন করে।
উপায় না বুঝে গত ২৫ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল আদালত-১ এ একটি মামলা দায়ের করেন। এতে ঐ ৩ ধর্ষককে আসামি করা হয়। তবে ধর্ষণের দীর্ঘ দিন পর মামলাটি করায় বিধিসম্মত না হওয়ায় আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। এরমধ্যে গত ৮ মে রাতে তার একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এখন এই সন্তানের দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না।
এদিকে নির্যাতীতা নারীও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমার স্বামীর বাড়ি থেকেও তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আমাকে। ৫/৭ বছরের ২ সন্তানও তারা রেখে দিয়েছে। এখন যে ছেলে সন্তান আমার হয়েছে তার আমি পিতৃপরিচয় চাই।’ তিনি আক্ষেপ করে প্রশ্ন রাখেন, ‘আমি নির্যাতিতা হয়ে বিচার পাইনি। এখন আমার সদ্যজাত সন্তান কি তার পিতৃ পরিচয় পাবে না।’
বিষয়টি নিয়ে এলাকাজুড়ে সর্বমহলে আক্ষেপের শেষ নেই। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুস, মোকবুল হোসেন সরদার, আমানত আলী প্রামানিক জানান, অসহায় এক নারীকে সুযোগ বুঝে এভাবে ধর্ষনের ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। ধর্ষকদের সঙ্গে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী মাতব্বররা কৌশলে সহযোগিতা করায় কিছু করতে পারছে না অসহায় মেয়েটি। এমতাবস্থায় সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অসহায় মেয়েটির পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। আমরা চাই ঐ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি এবং শিশুর পিতৃ পরিচয়।’
এদিকে ধর্ষকদের এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া জায়নি। ধর্ষকদের মধ্যে স্বপন ও লিটনের সঙ্গে ফোনে কথা বললে সাংবাদিক শুনে ফোন কেটে দেয়।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ দিলে ডিএনএ টেস্টসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যবস্থা করবো।’
সৌজন্যে- ইত্তেফাক