‘ডু ইউ হ্যাভ তার্কিস ভিসা’, ‘ইয়েস’ বলতে না বলতেই ‘লুক অ্যাট দি ক্যামেরা’ বলে পাসপোর্টে সিল মেরে দুই আঙুল উচিয়ে স্যালুটের ভঙ্গিতে হাসিমুখে ‘ওয়েলকাম টু ইস্তাম্বুল’ বলে পাসপোর্ট হাতে ফেরত দিলেন। ইমিগ্রেশন অফিসারের অমায়িক হাসিমুখের এমন ব্যবহারে দীর্ঘ প্রায় নয় ঘণ্টার ভ্রমণক্লান্তি যেন নিমিষেই কেটে গেল।
বিমানবন্দর রানওয়েতে পাইলট নিরাপদে ল্যান্ডিংয়ের পর যাত্রীরা সবাই সিটবেল্ট খুলে বাইরে বেরোবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন, কিন্তু উড়োজাহাজ আর থামেই না। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি বিশাল এলাকাজুড়ে বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কাজ চলছে। প্রায় ৪০ মিনিট কেটে গেল টার্মিনালের সামনে যেতে। উড়োজাহাজ থেকে নামতে মৃদু হিমেল বাতাসে মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেল।
বাইরে রোদের আবহাওয়া হলেও ঠান্ডা বাতাস বইছে। প্রথম দর্শনেই ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করল আর ইমিগ্রেশন অফিসারের সুন্দর ব্যবহার ভালোলাগাকে দ্বিগুণ করে তুলল। ইমিগ্রেশন থেকে বেরিয়ে পায়ে হেঁটে পথ চলা শুরু। হাতে এতটুকু ক্লান্তি লাগছে না। নবনির্মিত এ বিমানবন্দরটিতে সর্বত্র সৌন্দর্যের ছোঁয়া লেগে আছে। কোথায় কীভাবে যেতে হবে সর্বত্রই ইংরেজি ও মাতৃভাষায় লেখা রয়েছে।
লাগেজ ব্যক্তির সামনে এলে আরেক চমক। লাগেজ বেল্টের সামনে লাগেজ ঘুরছে কিন্তু কোনো মানুষজন নেই। যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে খুব সহজেই তাদের লাগেজ খুঁজে পাচ্ছেন। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে লাগেজ উঠিয়ে ট্রলিতে তুলতে গেলে ইলেকট্রনিক মেশিনে স্থানীয় মুদ্রা লিরা পরিশোধ করে তবেই ট্রলি পেতে হয়। ক্রেডিট কার্ড বা নগদ টাকায় লিরা পরিশোধ করলে তবেই পেমেন্ট স্লিপ বেরিয়ে আসে। এখানেও কোনো হট্টগোল নেই।
নতুন বিমানবন্দরনামা: বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমানবন্দর তুরস্কের ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর। ২০১৮ সালের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিমানবন্দর উদ্বোধন করেন। এদিন দেশটির ৯৫তম স্বাধীনতা দিবস ছিল। ইস্তাম্বুলের প্রধান বিমানবন্দর একসময় কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দর থাকলেও বর্তমানে এই বিমানবন্দর দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যাত্রীরা বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করবে।
তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরকে ট্রানজিট বিমানবন্দর হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। এই বিমানবন্দরে যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। এই বিশাল বিমানবন্দর তৈরি করতে প্রথম ধাপে খরচ হয়েছে ৫১০ কোটি ডলারের বেশি। সাত হাজার ৬০০ হেক্টর আয়তনের এই বিমানবন্দরটি এখন ইউরোপের অন্যতম বড় বিমানবন্দর। আপতত দুটি রানওয়ে ও একটি টার্মিনাল চালু হয়েছে।
এ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বছরে ৯ কোটি যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। এখানে একটি প্রধান এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার ও একটি কার্গো চালু হয়েছে। চালু হওয়া দুই রানওয়ের একটি ৪ দশমিক ১ কিলোমিটার অপরটি ৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার লম্বা। এই বিমানবন্দরে ৩৪৭টি বিমান অবস্থান করতে পারবে ২০৩০ সাল নাগাদ এবং ৬টি রানওয়ের কাজ শেষ হলে আর ৫০০টি বিমান একসঙ্গে অবস্থান করতে পারবে। বছরে ২০ কোটি যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে।
পুরোদমে চালু হয়ে গেলে কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। ইস্তাম্বুলের বিমানবন্দরকে তুরস্কের পক্ষ থেকে গ্রিন বা সবুজ বিমানবন্দর বলা হচ্ছে। এই বিমানবন্দরে বৃষ্টির পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
লেখক- মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল, সৌজন্যে- জাগো নিউজ