সংসদ সদস্য মো. ইস্রাফিল আলম বলেছেন, যেখানে ভারত, থাইল্যান্ড বা অন্যান্য দেশের শ্রমিকরা সমান কাজ করে বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে বাংলাদেশের শ্রমিকরা তার চেয়েও কম মজুরিতে কাজ করছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিদেশি ভাষা না বোঝা, কাজে অদক্ষতা এবং ওইসব দেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার না বোঝার কারণে বেশি কাজ করেও অনেক সময় সঠিক পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না বাংলাদেশি শ্রমিকরা। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের আইন, বিধি-বিধান তো আর বিদেশে চলবে না; তাই আইনকানুন, বিধি-বিধান না জেনে, ট্রেনিং না নিয়ে বিদেশে ঠকছেন তারা।
‘সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ’ শীর্ষক জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওয়্যারবির আয়োজনে আজ বুধবার এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন মো. ইস্রাফিল আলম।
মতবিনিময় সভায় ওয়্যারবির চেয়ারম্যান সাঈদ সাফিউল হকের সভাপতিত্বে এবং ডাইরেক্টর জেসিয়া খাতুনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য মো. ইস্রাফিল আলম ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গার্হস্থ্য মহিলা শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি মুরশেদা আক্তার নাহার, বিওএএফর চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান। এ বছরে ওয়্যারবির মহান মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে ইস্রাফিল আলম বলেন, ‘১৯৭৬ সাল থেকে মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ ১৯ কোটি ৬১ লাখ ৬২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গন্তব্য দেশসমূহের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, সৌদি আরব, ওমান, লেবানন ও কাতার। বাকিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। এ সকল অভিবাসী শ্রমিকের অধিকাংশ স্বল্পদক্ষ কর্মী ও স্বল্পশিক্ষিত।’
এমপি বলেন, ‘বেশিরভাগ অভিবাসী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা এবং দেশে অভিবাসী অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের কল্যাণে যথাযথ আইনের অভাবে দেশে-বিদেশে নানাভাবে শোষিত, নির্যাতিত ও প্রতারিত হচ্ছেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা। ’
বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের করুণচিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে অনেকে দিনে ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও ন্যূনতম মজুরি পান না। বিদেশে কাজ করার সময় তারা শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি তাদেরকে কাজের জায়গায় তালাবদ্ধ রাখা হয়। জাতিসংঘের অভিবাসীবিষয়ক বিভাগের মতে, ১০ জন অভিবাসী শ্রমিকের মধ্যে ৭ জন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন।’
ওয়্যারবির চেয়ারম্যান সাফিউল আলম বলেন, ‘ওয়্যারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন বরাবরই শ্রমিকের অধিকার আদায়ে সরব ছিল এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, সরকার, সুশীল সমাজ এবং মানবাধিকারকর্মীদের সচেতন প্রচেষ্টাই পারে শ্রমিকদের বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে।’
মতবিনিময় সভায় ওয়্যারবির দাবিগুলো ছিল-বিনা খরচে বিদেশ গমন নিশ্চিত করতে হবে; অভিবাসী শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা, বিশ্রাম ও ছুটির সময় নিশ্চিত করতে হবে এবং অভিবাসী গৃহশ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় আইএলও কনভেনশন-১৮৯ অণুস্বাক্ষর করতে হবে।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ