ক্যাম্পিং-কথাটাতে যেন এক রোমাঞ্চ লুকিয়ে আছে। ক্যাম্পিংয়ে গেলে বোঝা যায় যে কষ্টের মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ করা যায়। এ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমার জীবনের প্রথম ক্যাম্পিং ছিল রাজবাড়িতে । প্রথম যখন শুনেছি যে “আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক কামরুজ্জামান স্যার ক্যাম্পিং এ নিয়ে যাবে” – শুনে কিছুটা অবাক, তবে যেমন ভালো লাগলো, তেমনি মনে হতে লাগলো ওখানে গিয়ে কিভাবে থাকবো? গত ১৯ শে এপ্রিল সকাল ৬ টায় বের হলাম। তারপর ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখলাম সবাই চলে এসেছে। ৭টা ৩০ এ রাজবাড়ির উদ্দশ্যে রওনা হলাম। যখন শুনলাম বাস ফেরী দিয়ে যাবে – তা শুনে খুব খুশি হলাম কারণ আমি জীবনে কখনো ফেরীতে যাতায়াত করি নি। ফেরীতে যাওয়ার জন্য অনেকক্ষণ থেমে থাকার পর আমি যখন ফেরীতে উঠলাম এরপর আমরা ফটোসেশান করলাম। তারপর খুব তাড়াতাড়ি রাজবাড়ি গিয়ে ওখানে ঐতিহাসিক পুরাতন হাই স্কুল বিল্ডিং দেখে নিয়ে আমরা লাঞ্চ করলাম। তারপর সরাসরি ক্যাম্পিং স্পটে চলে গেলাম।
তারপর ওখানে গিয়ে আমরা দুইটা বাংকার দেখলাম, তারপর আমাদের তাবু বানানো শেখানো হয়। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে তাবু বানানো শিখলাম। ভাবলাম তাবু বানানো খুব সহজ কিন্তু বানানোর সময় দেখলাম একটি তাবু বানানো কতো কঠিন। অনেক কষ্টে তাবু টাঙানো শেষ করে , আমরা পদ্মা নদীতে নামি। এর আগে কখনো নদীতে নামা হয় নি । তাই আমার নদীতে নেমে পানির শীতল স্পর্শে সকল ক্লান্তি যেন দূর হয়ে গেলো, অনেক আনন্দ পেলাম।
রাতে খোলা আকাশের নিচে বন্ধুবান্ধব দের সাথে প্রকৃতি উপভোগ করলাম। এরপর টেন্টে ফিরে যেয়ে ঘুমাতে চেষ্টা করলাম, চারিদিকের নিস্তব্ধতা আর ঝিঝি পোকার ডাকে প্রথমে ঘুমাতে কষ্ট হয়েছিল । সকালে উঠে আমরা খেলাধুলায় মেতে উঠলাম । মেয়েরা পিলো পাসিং ও সবাই লুঙ্গি খেলা খেললাম। তারপর আমরা আবার নদীতে নামলাম। নদী থেকে উঠে লাঞ্চ করলাম। এরপরে ট্রলারে করে পদ্মায় ভ্রমণ করলাম। বালুচরে নেমে সূর্যাস্ত উপভোগ করলাম। এরপরে ফিরে এসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করলাম। আমরা বারবিকিউ ডিনার করলাম। এরপরে ক্যাম্পাফায়ারের আগুনে ক্যাম্পিংয়ের আসল রোমাঞ্চ অনুভব করলাম। তারপর আমরা একসাথে অনেক গুলো ফানুস আকাশে ওড়ালাম । তারপরে ফানুস ওড়ানো উপভোগ করতে করতে একসাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। দুদিনেই জায়গাটার প্রতি মন বসে গিয়েছিল। ফিরতে ইচ্ছে করছিল না। তবুও তো ফিরতে হয়। শত মন কেমনকে দূরে ঠেলে আমি ফিরে আসলাম। তবে এখনো মাঝে মাঝে আমি ক্যাম্পিংয়ের স্মৃতিতে হারিয়ে যাই।
তাসমিম জান্নাত ওহী , প্রথম বর্ষ , ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।