বিএনপির বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা মামলাও দায়ের করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে হাজার হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে, শত শত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তাদের অপকর্মের কারণেই মামলা হয়েছে, একটি মিথ্যা মামলাও দেয়া হয়নি। বিএনপির অপকর্মের কারণেই জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অথচ ২০০১ সালে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল যে আমরা আওয়ামী লীগের অফিসেও যেতে পারতাম না। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছিল। নেতাকর্মীরা কেউ বাসায় থাকতে পারতো না। আমাদের এমপিদের, নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাড় গুড়ো করে দেয়া হয়েছে, অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। সরকারের বাইরে হাওয়া ভবন ছিল বিএনপির সকল অপকর্মের মূল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভায় সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফের সঞ্চালনায় আনুষ্ঠানিকভাবে সভা শুরু হয়। সভার শুরুতে শোক প্রস্তাব করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন, ২১তম জাতীয় সম্মেলন, তৃণমূলের সম্মেলন ও কোন্দল নিরসনে করণীয়, উপজেলা নির্বাচনের মূল্যায়ন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। সভায় নব গঠিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি একরামুল হক টিটুকে দলীয় মনোনয়নের সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপির দুর্দশার কারণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা মেরে তাদের চেয়ারপারসনের জেলে থাকা যে মামলা আমরা করিনি, মামলা দিয়েছিল তত্ত¡াবধায়ক সরকার। যাদের খালেদা জিয়া নিজেই বসিয়েছিল। আর তাদের দলের উপর লন্ডন থেকে ওহী নাজিল হয় তাই দলটির দুর্দশা। খালেদা জিয়া জানায় ওমুক দলের মনোনয়ন পাবে আর লন্ডন থেকে ওহী নাজিল হয় আরেকজন মনোনয়ন পাবে। গত নির্বাচনে ৩০০ আসনে ৬৯২ জনকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। বিএনপির প্রতি জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে আর আওয়ামী লীগের উন্নয়নের প্রতি মানুষের ভরা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের রেড এলার্টের বিষয়ে তারা বাংলাদেশকে কোনো কিছুই অবহিত করেনি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের বিষয়ে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে, তাদের গোয়েন্দা সংস্থা বা হাইকমিশন থেকে জানানো কর্তব্য ছিল ঠিক কি ব্যাপারে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে জানার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় অগ্নিকাÐের স্থানে মানুষের সেলফি তোলার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোথাও আগুন লাগলে কিছু মানুষ অযথাই ভিড় করে। চৈত্র-বৈশাখে আমাদের দেশে আগুন লাগার একটা প্রবণতা থাকে। এটা ছোটবেলা থেকেই আমরা দেখে আসছি। ফায়ার সার্ভিস যখন অগ্নিনির্বাপণে যায়, তখনও কিছু লোক সেখানে ভিড় করে, তাদের মারতে যায়, এমনকি বনানীর আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছে। একেকটা গাড়ির দাম আট থেকে দশ কোটি টাকা। তারা উদ্ধারকারীদের ওপর হামলা না চালিয়ে, সেলফি না তুলে যদি এক বালতি করে পানিও নিয়ে যেতো, তাহলেও কাজ হতো। আগুন নেভানোর কাজ না করে সেলফি তুলে মানুষ কী যে আনন্দ পায় বুঝি না! আমাদের মন-মানসিকতার আরো পরিবর্তন করতে হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়ার আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে সম্প্রতি কয়েকটি আগুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও কিছু লোক দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ারের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষও নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করায় তাদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আয়বৈষম্য কমিয়ে এনে উন্নয়নের ছোঁয়া যেন প্রতিটি আনাচে-কানাচে পৌঁছে যায়, আমরা সেই কাজগুলো করে যাচ্ছি। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি, এগুলো শেষ হলে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। হতদরিদ্র বলে কেউ থাকবে না, তৃণমূলের মানুষদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এখন কেউ চাইলে কিন্তু অর্থ উপার্জন করতে পারে, চাইলে কাজ করতে পারছে লোকজন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। মানুষ যেহেতু বিশ্বাস রেখেছে, সেই বিশ্বাস রাখার জন্য আমরা কাজ করছি। ২০৭১ সালে আমরা হয়তো থাকব না, যারা থাকবে, উন্নত দেশের নাগরিক হিসেবে তারা স্বাধীনতার শতবর্ষ পালন করবে।
সৌজন্যে- ইনকিলাব