Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

singapore-shiponবাস থেকে নেমে পকেট থেকে সিগারেট বের করে আগুন ধরালো আবেদ। সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে মুখভর্তি ধোয়া ছেড়ে নিজেকে নিয়ে ভাবতে লাগল। কোম্পানি যে হারে কর্মী ছাটাই করছে, না জানি কবে তার নামটাও কর্মী ছাটাইয়ের তালিকায় চলে আসে।

কোম্পানির কাজ কমে যাওয়ায় ওভারটাইম বন্ধ৷ এখন বেসিক ডিউটি করে কোনরকমভাবে চলে যাচ্চে তার৷ যে টাকা বেতন পায় তা দিয়ে কোনরকম চলে যায়। সঞ্চয় করার মত সব রাস্তা বন্ধ। সে কিছুদিন যাবত পার্টটাইম জব খুঁজছে। গত সপ্তাহে একদিন পার্ট টাইম জব করে এসেছে৷ সিঙ্গাপুরে তারমত অনেকেই পার্টটাইম জব করছে, অতিরিক্ত রোজগার করে ভালই চলছে।

chardike-ad

পার্টটাইম জব হল অফিস শেষে বিশ্রাম না নিয়ে ঘন্টা ভিত্তিক কোথাও কাজ করা। এখানেও সমস্যা আছে, যারা কাজ যোগাড় করে দেয় তারা মাথাপিছু ৫ ডলার দালালি খায়৷ এমনকি অনেকসময় পুরো টাকাই হাতিয়ে নেয়৷ অভিবাসী কর্মীরা যেহেতু লুকিয়ে কাজ করে তাই কারো কাছে এ ব্যাপারে নালিশ করতে পারে না। সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিটে উল্লেখিত কাজের বাহিরে কাজ করা বেআইনি। আর এ সুযোগটা কিছু অসাধু ব্যক্তি কাজে লাগায়। কাজ করিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়৷

আবেদ গত সপ্তাহে যে পার্ট টাইম জব করেছিল তার মজুরি এখনো পায়নি। কথা ছিল ৫ ডলার দালালি খাবে আর কাজ শেষে মজুরী পরিশোধ করবে৷ কিন্তু তারা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। আজ গিয়েছিল পাওনা টাকা আদায় করতে। টাকা তো দূরের কথা যে লোক কাজ দিয়েছিল আজ তার দেখাই পায়নি৷

ভাবতে ভাবতে আবেদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে৷ পুরনো বছর শেষ নতুন বছর শুরু হয়েছে। অথচ তার জীবনে কোন পরিবর্তন নেই। বরং নতুন বছর তার হতাশা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ নতুন বছর মানেই নতুন প্রত্যাশা। পুরনো বছরের অঙ্গীকার পূরন করার বছর৷ গতবছরে সে প্রতিজ্ঞা করেছিল, এ বছর বোনকে বিয়ে দিবে, নতুন ঘর করবে এবং নিজেও বিয়ে করবে৷

গত দুইবছর যাবত সে একই প্রতিজ্ঞা করছে। প্রতিজ্ঞা পূরন করতে চাই টাকা। টাকার জন্য চাই কাজ। কিন্তু গত দুইবছরে তার ইনকাম এক টাকাও বাড়েনি৷ ইনকাম না বাড়লে তো প্রতিজ্ঞা পূরন করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না৷ এভাবে মিথ্যে আশ্বাস দিয়েই তাকে বছরের পর বছর পার করতে হবে!

ভেবেছিল বসের কাছে গিয়ে বেতন বাড়ানোর কথা বলবে কিন্তু হঠাৎ শুনল নতুন বছরে আরো কিছু কর্মী ছাটাই করা হবে। তাই বসকে আর বেতন বাড়ানোর কথা বলা হয় না।

পরিবারের প্রত্যাশা না পূরনের টেনশন, চাকরি হারানোর টেনশনে মাথায় ঝট পাকিয়ে যায় আবেদের৷ সিগারেটে শেষ টান দিয়ে অবশিষ্ট অংশটুকু পায়ের নিচে ফেলে পিষ্ট করে এগিয়ে যায় আবেদ৷

বাসায় ফিরে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়। দেশ থেকে একের পর এক কল আসছে কিন্তু কারো কল সে রিসিভ করছে না। তার ভেতরটা গোপন কান্নায় ফেটে যাচ্ছে। তাকে যেকোন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চাকরি ছেড়ে দেশে চলে যাওয়াই তারজন্য উত্তম। কিন্তু সে জানে দেশে গিয়ে যে আয় হবে তা দিয়ে পরিবারের ভরনপোষণ কষ্টকর হয়ে যাবে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না৷

নতুন বছর উদযাপন উপলক্ষে চারপাশ মুখরিত৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তায় ভরপুর। কিন্তু নতুন বছর আবেদের জীবনে কোন প্রভাব ফেলেনি৷ শুধু আবেদ নয় তার মত নিম্ন আয়ের প্রবাসীদের জীবনে কোন উৎসবই প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তাদের কাছে প্রত্যেকটা দিনই সমান। ভোরে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে অফিসে যাও। অফিস শেষে বাসায় ঘুমাও। এছাড়া তাদের আর কিছুই করার থাকে না।

বিছানা থেকে উঠে বাথটাপের নিচে দাড়িয়ে পানি ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকে আবেদ। জলের সাথে তার ভেতরের সব কষ্ট, সব দু:খগুলো ভেসে যাক। পানির নিচে দাঁড়িয়ে কেন জানি তার ইচ্ছেমত কান্না করতে ইচ্ছে করছে। এখানে কান্না করলে কেউ তার চোখের জল দেখবে না। নিজের অজান্তেই তার চোখের পাতা গলে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়তে লাগল। মনের ভেতর কষ্টগুলো যখন পুঞ্জীভূত হয় তখন তা চোখের জল এমনিতেই গড়িয়ে পড়ে। আবেদ মনে মনে বলছে মুক্তি চাই এই দু:সহ জীবন থেকে মুক্তি চাই প্রবাস জীবন থেকে৷

লেখক- ওমর ফারুকী শিপন, সিঙ্গাপুর থেকে