Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
nikhil
ক্রেতার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন নিখিল

প্রায় মধ্যরাতে রাজধানীর ফার্মগেট ফুট ওভারব্রিজের ওপর দিয়ে দ্রুত হেঁটে বাসায় ফেরার পথে দৃষ্টি গেল এক মরিচ বিক্রেতার দিকে। কয়েক ডজন বোম্বাই মরিচ নিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছেন তিনি। মরিচ কেনার প্রয়োজন না থাকলেও শুধুমাত্র কথা বলার উদ্দেশ্যেই মরিচের দাম জানতে চাওয়া তার কাছে। কিন্তু কয়েকবার প্রশ্ন করার পরও কোনো সাড়া মিলল না। পরে শরীরে মৃদু ধাক্কা দিতেই চোখ মেললেন তিনি। চোখ মেলেই তার মন্তব্য, ‘ঘুমাই গেছিলাম বাজান। মরিচ নিবেন? একেবারে আসল বোম্বাই মরিচ’

ক্ষীণ কণ্ঠে মরিচ বিক্রির অনুনয় শুনে না করা গেল না। কিছু মরিচ দিতে বলে নাম-ঠিকানা জানতে চাইলাম। তিনি জানালেন, নাম নিখিল চন্দ্র দাস। বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর গ্রামে।

chardike-ad

নিখিল জানান, গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীর কাওরান বাজারের কাঁচামালের আড়তে শ্রমিকের কাজ করেন। একই সঙ্গে ট্রাক থেকে পড়ে যাওয়া কিংবা ফেলে দেওয়া সবজিও কুড়িয়ে জমা করেন। এরপর কোনো আড়তের এক কোনায় শরীর এলিয়ে ঘুমিয়ে নেন কিছুটা সময়। পরে আবার নিজের কুড়ানো সবজি বিক্রির জন্য বিভিন্ন পথের ধারে বসে পড়েন তিনি।

এ সময় পরিবারের সদস্যদের কথা জানতে চাইলে নিখিলের বিষণ্ন মুখে নিমিষেই হাসি ফুটে উঠে। জানালেন পরিবারে স্ত্রী ও চার মেয়ে তার। সবচেয়ে বড় মেয়ের নাম সুইটি, তারপর তিথি, তার ছোট বৃষ্টি আর সবচেয়ে ছোট মেয়ে সাথী।

তিনি জানান, বড় মেয়ে সুইটি নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় একটি কলেজে অনার্সে পড়েন। তিথি আগামী বছর এসএসসি দেবে। বৃষ্টি চলতি বছরে ক্লাস এইটে উঠেছে। আর সাথীকে এখনও স্কুলে ভর্তি করাননি।

নিখিল জানান, নিজে পড়াশোনা করতে পারেননি, তাই মেয়েদের শিক্ষিত করার স্বপ্ন তার। মেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে দিনরাত লড়াই করছেন তিনি। বাড়িতে কিছু টাকা বেশি পাঠানোর জন্য ঢাকায় কোনো মেস বা বাসাও ভাড়া নেননি তিনি। সেজন্য ঘুমানোর প্রয়োজন হলে কোনো আড়তের কোনায় জায়গা খুঁজতে হয় তাকে। তিনবেলায় খেতে হয় রাস্তার ধারের কমমূল্যের কোনো হোটেলে।

তবে এতেও কোনো কষ্ট নেই নিখিলের। হাতে কিছু টাকা জমলেই বাড়িতে গিয়ে সবাইকে দেখে আসেন তিনি। আর বড় মেয়ে এখন প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচের অনেকটাই আয় করতে শিখে গেছে, এটা নিয়েও অনেক আনন্দ নিখিলের।

সৌজন্যে- সমকাল