নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ভয়াবহ স্মৃতি পেছনে ফেলে নিরপাদে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। শনিবার (১৬) মার্চ রাত ১০টা ৪০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছান তারা। এসময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন, সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনসহ ক্রিকেট বোর্ডের কমৃকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিমানবন্দরে পৌঁছেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তবে তার চোখে মুখে হয়ত সেই স্মৃতি তখনও ভেসে উঠছিল। রিয়াদ বলেন, ‘আমি জানিনা কীভাবে শুরু করবো শুধু এতটুকু বলতে চাই, আমরা খুব ভাগ্যবান যে আমরা এই মুহূর্তে এখানে আছি এবং আপনাদের সবার দোয়ায় দেশবাসীর দোয়ায়, বাবা-মা পরিবার পরিজন সবার দোয়ায় এখন এখানে আছি। আমি এটা বর্ণনা করতে পারবনা যে আমরা এখন কিসের মধ্যে আছি। এটা কারোই কাম্য না। আমি এবং আমার টিমের কেউই সারারাত ঘুমাতে পারেনি। যখন রুমের মধ্যে ছিলাম তখন এতটুকুই মনে হচ্ছিল আমরা কতটুকু ভাগ্যবান। নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে এটা খুবই অপ্রত্যাশিত। দেশবাসীকে ধন্যবাদ, আমাদের জন্য দোয়া করবেন যাতে এই মানসিক অবস্থা থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে পারি। বিসিবিকে ধন্যবাদ আমাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য।’
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আসলে ওরা যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এসেছে, ঘটনার পরপরই ওদের সঙ্গে কথা বলেছি তখনই বুঝতে পেরেছি আসলে ওদের ওপর দিয়ে মানসিকভাবে কী যাচ্ছে। তখন থেকেই ওরা বসে ছিল যে কখন দেশে আসতে পারবে, কত তাড়াতাড়ি। লম্বা জার্নি করে এসেছে সবাই ক্লান্ত, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে অনেকেই। আমরা সবাইকে বলেছি, বাসায় যাও। সবকিছু বাদ দিয়ে নিজেদের মতো করে যেভাবে ভালো লাগে সময় কাটাও। সবকিছু স্বাভাবিক হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবা। খেলাধুলা নিয়ে আপাতত চিন্তা করতে হবে না, পরিবার পরিজনদের নিয়ে সময় কাটাও। কোনো ধরনের সহযোগিতা লাগলে আমরা তো আছি।’
ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভাল মাঠে শনিবার (১৬ মার্চ) বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার তৃতীয় টেস্ট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হ্যাগলি ওভালের খুব কাছের একটি মসজিদসহ দুই মসজিদ ও পৃথক আরও এক স্থানে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট বাতিল করা হয়।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদসহ কয়েকটি স্থানে দুই সন্ত্রাসীর বর্বরোচিত হামলায় অন্তত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই বাংলাদেশিও রয়েছেন। অনেকেই আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন সফররত বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।
মসজিদের কাছেই মাঠে অনুশীলন করছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। অনুশীলন শেষে তারা মসজিদটিতে জুমার নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন। খেলোয়াড়রা সেখানে গিয়ে শুনতে পান মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এরপর তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে মাঠের দিকে চলে যান। সেসময় তাদের জন্য কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না।
এরপর বাংলাদেশের টিম হোটেলসহ আশেপাশের পুরো এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। বিমানবন্দর ছাড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ দলকে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়।
সৌজন্যে- বাংলানিউজ