যুক্তরাজ্যে ক্রমাগত ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন নারীরা। গত দশ বছরে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে এবং তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। ব্রিটিশ সংস্থা ‘ফেথ ম্যাটার্স’র সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইসলাম ধর্ম নিয়ে কাজ করা এই সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে, যারা ধর্মান্তরিত হয়েছে তাদের কারো বয়সই ২৭ বছরের বেশি নয়। এদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ৬২ শতাংশ।
ইসলাম গ্রহণ করা যুক্তরাজ্যের লিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ফ্রাঞ্চেসকা বলেন, “আমি বিশেষ কোন ধর্মের সন্ধান করছিলাম না। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কেও বিশেষ কোনো ধারণা আমার ছিল না। আমি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর।”
তিনি আরও বলেন, “ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি পরিচিত হই বেশ কিছু মুসলমান শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তখনই প্রথম আমি জানতে পারি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে, ধর্মের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে। সবাই যেভাবে কথা বলে, আরেকজনের সঙ্গে মেশে, তা দেখে আমি অভিভূত হই। বিশেষ করে ছেলেরা অত্যন্ত অমায়িক এবং তারা মেয়েদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করে।” ফ্রাঞ্চেসকা এগুলো দেখে ইসলামের প্রতি আগ্রহী হন এবং ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
‘ফেথ ম্যাটার্স’র জরিপ অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। ইসলাম নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব সবসময়ই সমালোচনায় মুখরিত। ইসলাম ধর্ম নিয়ে এত বিতর্কের পরও কীভাবে এই ধর্মের প্রতি মানুষ আগ্রহী হয়?-সেটাই ভাবাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বকে। শ্বেতাঙ্গ মেয়েদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রক্ষণশীলদের মধ্যে চিন্তার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ইসলাম গ্রহণের তথ্যের মূল উৎস মসজিদগুলো হলেও মসজিদগুলো সবসময় নির্ভুল তথ্য দিতে পারেনা। যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে কিন্তু মসজিদে যায়নি তাদের কথা মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানে না। আবার তাদের ‘শাদাহ’ সার্টিফিকেটও প্রদান করা হয়নি।
আয়ারল্যান্ডের বাতুল আল তোমা, যিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক প্রকল্পে কাজ করছেন তিনি বলেন, নানান কারণেই আমাদের গবেষণা এবং মসজিদের তথ্যগুলোর মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। তিনি আরও বলেন, “ বর্তমানে ইসলাম গ্রহণ করছে আরও বেশি মানুষ এবং তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা। আগে দেখা যেত, বিবাহিত মহিলারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। কারণ স্বামী মুসলমান। অথচ এখন অবিবাহিত মেয়েরাই এগিয়ে আসছে।
শিক্ষিত এবং অবিবাহিতরা ইসলাম গ্রহণে এগিয়ে আসায় এটা নিশ্চিত হয়েছে যে, নির্ভরতা নয় বরং সচেতনভাবেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে তারা। তবে সামাজিক সমস্যা এখনো রয়েছে। যে সব মেয়েরা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তারা তাদের পরিবার বা বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে সরে গেছে। অনেক দূরে সরে গেছে। ফ্রাঞ্চেসকার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।