কাঁপতে কাঁপতে যতোটা দ্রুত সম্ভব হাঁটছেন তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি মিরাজ, সিনিয়র সদস্য তামিম ইকবাল চেষ্টা করছেন নিজেকে সামলে রাখতে, পেছনে মুশফিকুর রহীম যেনো কেঁদেই দিচ্ছেন, সৌম্য সরকারের চেহারায় স্পষ্ট ভয়ের ছাপ- শুক্রবারের সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা টিভিতে চোখ রাখা বাংলাদেশের মানুষদের সামনে ভেসে উঠেছে এমনই চিত্র।
যেখানে দেখা মিলেছে ভীত ও আতঙ্কিত বাংলাদেশ দলের চেহারা। হবেই না কেন? অল্পের জন্য যে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন দলের প্রায় সব খেলোয়াড়। টাইগার ক্রিকেটারদের খোদাভীতির কথা সবার জানা।
তাই তো আজ ক্রাইস্টচার্চে অনুশীলন শেষ করে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করতে হাগলি ওভাল স্টেডিয়ামের অদূরবর্তী মসজিদ আল নুরে যাচ্ছিলেন দলের খেলোয়াড়রা। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী স্থানীয় সময় বেলা দেড়টায় মসজিদে থাকার কথা ছিলো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।
কিন্তু শনিবারের ম্যাচের আগের দিন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ-ছয় মিনিট সময় বেশি ব্যয় করে ফেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিংবা সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকরা। আর এই পাঁচ মিনিটই যেনো বাঁচিয়ে দিয়েছে পুরো বাংলাদেশ দলকে। কেননা পাঁচ মিনিট আগে মাঠ ছাড়লে কিংবা মসজিদে সময়মতো পৌঁছে গেলে হয়তো আর ফিরে পাওয়া যেতো না দেশের ক্রিকেটের প্রতিনিধিদের।
সংবাদ সম্মেলনে বেশি সময় লেগে যাওয়ায় মসজিদে পৌঁছতে প্রায় ১টা ৪০ মিনিট হয়ে যায়। আর এতেই যেনো বেঁচে যান তামিম, মুশফিক, তাইজুল, মিরাজরা। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ‘দেরি’ হয়ে যাওয়ায় বাস থেকে নেমেই তড়িঘড়ি করে মসজিদের পথে পা বাড়ান ক্রিকেটাররা।
পথিমধ্যে তাদের আটকে দেন বাসের পাশেই গাড়িতে থাকা আহত এক নারী। তিনি মুশফিক-তামিমদের বারণ করেন সামনের দিকে যেতে। তখনো ক্রিকেটাররা জানতেন না কী হয়েছে সামনে, কেনোই বা যেতে বারণ করা হয়েছে। পরে সেই ভদ্রমহিলাই জানান মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে এবং আশেপাশের অনেকেই গুলিবিদ্ধ।
এ সতর্কবার্তা পেয়ে প্রথমে নিজেদের টিম বাসেই অবস্থান নেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু বাসের মধ্যে নিরাপত্তা কর্মী দূরে থাক নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় কেউই না থাকায় বেশিক্ষণ নিরাপদ মনে হয়নি সে জায়গাটি। তাই বাস থেকে হাগলি পার্কের মধ্য দিয়ে আবার মাঠে ফিরে আসেন সবাই। সেখানে কিছুক্ষণ ড্রেসিংরুমে বসে থেকে সবাই মিলে চলে যান টিম হোটেলে। যেখানে আগে থেকেই ছিলেন দলের কোচিং স্টাফরা।
টিম হোটেলে পৌঁছেই বিস্তারিত জানতে পারেন মুশফিক-তামিমরা। মসজিদ আল নুরে ‘ব্রেন্টন টেরেন্ট’ নামক এক ব্যক্তির সন্ত্রাসী হামলায় এখনো পর্যন্ত অন্তত ২৭ জনের নিহতের খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। যেখানে হয়তো থাকতে পারতো দেশবরেণ্য ক্রিকেটারদের নামও। সংবাদ সম্মেলনে হওয়া পাঁচ মিনিটের ‘দেরি’টাই আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে পুরো বাংলাদেশের জন্য।
এদিকে ঘটনার আকস্মিকতায় ভীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে পুরো বাংলাদেশ দল। জানায় যত দ্রুত সম্ভব নিউজিল্যান্ড ছেড়ে দেশে ফিরতে চান তারা। এমতাবস্থায় শনিবারের ম্যাচটিও বাতিল ঘোষণা করেছে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড।
চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এ ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ অভিজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার তামিম ইকবাল নিজের টুইটার একাউন্টে লিখেছেন, ‘পুরো দল গোলাগুলির হাত থেকে বেঁচে গেলো। খুবই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম টুইট করেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ্! ক্রাইস্টচার্চে হামলার ঘটনা থেকে আল্লাহ্ আজ আমাদের বাঁচিয়ে দিলেন। আমরা অনেক বেশি ভাগ্যবান। কখনোই এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে চাই না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
সৌজন্যে- জাগো নিউজ