প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ক্লাস ওয়ানে ভর্তির জন্য ছাপানো প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়, এই প্রক্রিয়াটি বাতিল করতে হবে। বয়স হওয়ার সাথে সাথে এলাকাভিত্তিক প্রাইমারি স্কুলে সমস্ত শিশুকে ভর্তি নিতে হবে। স্কুলে যাওয়ার অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে।
বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৯’র উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন এমন বাংলাদেশ গড়তে, যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। আজকের সোনামণি, ছোট-ছোট শিশু-কিশোর তারাই এ দেশের সোনার ছেলে-মেয়ে, তারাই ভবিষ্যতে দেশ গড়ে তুলবে। সেই আশাই পোষণ করি।
“আমরা সব সময় শিশুদের মনে করি, তারা আমাদের আগামীর ভবিষ্যত। তারা এমন একটি সমাজে বাস করবে, যে সমাজ হবে সুন্দর, উন্নত ও সমৃদ্ধশালী। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি”- বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমি ঢাকার কোনো একটি স্কুলে প্রাইমারিতে একটা বাচ্চাকে ভর্তি করাতে যখন পাঠালাম, সেখানে দেখা গেল তাকে ছাপানো প্রশ্নপত্র দেওয়া হলো। আমি বললাম, এই বাচ্চারা যদি ছাপানো প্রশ্নপত্র পড়ে উত্তর লিখতে পারে তাহলে এতো তাড়াতাড়ি স্কুলে যাবে কেন? স্কুলে যাওয়ার তো দরকারই হয় না। এটা এক ধরনের মানসিক অত্যাচার। এটার কোনো দরকার নেই”- বলেন শেখ হাসিনা।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত না। আমরা প্রি-প্রাাইমারি শিক্ষাও শুরু করেছি। প্রি-প্রাইমারি এবং প্রাইমারি শিক্ষাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে- ৭ বছর বয়স হলে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠায়, তার আগে পাঠায় না। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক ছোটবেলায় বাচ্চারা স্কুলে যায়। কিন্তু তারা যেন খেলতে-খেলতে, হাসতে-হাসতে সুন্দরভাবে নিজের মতো পড়াশোনা করে নিয়ে পড়তে পারে, সে ব্যবস্থাই করা উচিত।
“সেখানে অনবরত পড়ো-পড়ো বলা বা ধমক দিলে, তাদের আরও বেশি চাপ দিলে শিক্ষার ওপর তাদের আগ্রহটা কমে যাবে, একটা ভীতি সৃষ্টি হবে। সেই ভীতিটা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে আমাদের শিক্ষক এবং অভিভাবকদের অনুরোধ করবো। অনেক সময় আমরা দেখি, প্রতিযোগিতা শিশুদের মধ্যে না হলেও মায়েদের মধ্যে কিংবা বাবা-মায়ের মধ্যে একটু বেশি হয়ে যায়। এটা কিন্তু একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে আমি মনে করি”- বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, সব শিক্ষার্থীর তো সমান মেধা থাকবে না। যার যেটা স্বাভাবিকভাবে আসবে, সেখানে তাকে সহযোগিতা করতে হবে। যেন সে তার শিক্ষাটাকে আপন করে নিয়ে শিখতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাথমিক থেকেই যেন কম্পিউটার শিখতে পারে সে ব্যবস্থাও আমরা ধীরে ধীরে নেব। শুধু ঘরে বসে বই পড়ে শিখবে না, দেখে দেখে শিখবে।
এ সময় তিনি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনসহ শিক্ষাখাতে ডিজিটালাইজেশনে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৫ হাজার নতুন বিদ্যালয় উন্নত করার লক্ষ্যে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। শিক্ষকদের মর্যাদা, বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।
অভিভাবকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের একটা প্রবণতা আছে। অনেকেই ধারণা করেন যে, ইংরেজি শিক্ষা না দিলে বোধ হয় শিক্ষাই গ্রহণ করলো না। কথাটা কিন্তু ঠিক নয়। কারণ আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে যারা শিক্ষকতা করেন, তারা অনেক বেশি ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং শিক্ষিত। যারা উচ্চবিত্ত, যারা বিত্তশালী, তারা হয়তো তাদের ছেলে-মেয়েকে কোনো বিশেষ স্কুলে পড়াতে চান। কিন্তু এলাকাভিত্তিক প্রত্যেকটি শিশু যেন খুব সহজে স্কুলে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল হোসেন।
সৌজন্যে- সারাবাংলা ডট নেট