বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একের পর এক কারিগরি ত্রুটির কারণে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী তিনটি ড্যাস-৮ উড়োজাহাজ যেন মুড়ির টিনে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন এসব অচল উড়োজাহাজের জন্য সমানে বাতিল হচ্ছে ফ্লাইট। ফলে আকাশপথের যাত্রীরা বেশি ভাড়ায় অন্য এয়ারলাইন্সে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রতিদিন অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীরা ফ্লাইট বাতিল হওয়ার কারণে স্টেশনগুলোতে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটের বিভিন্ন স্টেশনে প্রতিদিনই যাত্রীদের সঙ্গে বিমানস্টাফদের বাগবিতণ্ডা হচ্ছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অপারেশনের একটি সূত্র জানায়, গত সোমবার বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার কথা ছিল বিমানের বিজি-৪৯১ ফ্লাইটটির। কারিগরি ত্রুটির কারণে ফ্লাইটটি যথাসময় উড্ডয়ন করতে পারেনি। ৩৪ অন-বোর্ড যাত্রী নিয়ে একসময় আকাশে ওড়ে উড়োজাহাজটি। কিন্তু আকাশেই ফের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ঢাকার কন্ট্রোল টাওয়ার সেটিকে রাজশাহী যেতে বারণ করে। ফলে উড়োজাহাজটি ফের ঢাকায় ফিরে আসে। বেলা ৩টায় বিজি-৪৯১ রাজশাহীর উদ্দেশে উড্ডয়ন করে। একই দিনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বিলম্বে ৫১ যাত্রী নিয়ে রাজশাহী থেকে ছাড়ে ঢাকাগামী বিজি-৪৯২।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল আলম বলেন, কিছুটা সমস্যা থাকলেও তা কাটিয়ে উঠছি। অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট নিয়মিত হতে শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দেড় মাসে বিমানের কোনো ফ্লাইট সময়সূচি অনুযায়ী পরিচালনা করা যাচ্ছে না। বহরে থাকা তিনটি ড্যাস-৮ এজিকিউ, এজিডব্লিউ ও এজিআরে প্রায় সময়ই কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ছে। গত ২৫ জানুয়ারি এজিকিউ বড় ধরনের মেরামত ‘সি’ চেকের জন্য এক সপ্তাহের জন্য ভারতের হায়দরাবাদের জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানিতে পাঠানো হয়। প্রায় দেড় মাস পর গত ৬ মার্চ উড়োজাহাজটি ঢাকায় আসার আগেই আবার বিকল হয়।
দ্বিতীয় এজিডব্লিউ উড়োজাহাজটি প্রতিদিনই টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়ে ফ্লাইট সিডিউলে বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। অবশিষ্ট ড্যাস-৮ এজিআর দিয়ে কোনোরকম চলছে অভ্যন্তরীণ সাতটি রুটের ফ্লাইট। যে কারণে প্রতিদিন অন্তত চার-পাঁচটি ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। বিমানের এ ব্যর্থতার সুযোগ নিচ্ছে দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলো। সুযোগের সৎ ব্যবহার করে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো বিভিন্ন রুটে ২৭শ’ টাকার টিকিট বিক্রি করছে ৯-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সব মিলিয়ে বিমানের সেবার প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন যাত্রীরা।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, এয়ারক্রাফটের টেকনিক্যাল সমস্যায় কারও হাত নেই। উন্নত যাত্রীসেবা নিশ্চিতে বিমান বদ্ধপরিকর। কোনো এয়ারক্রাফটে ছোটখাটো সমস্যা হলে আমাদের পাইলটরা সেটা নিয়ে অপারেশনে যেতে চান না। সেফটিকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেন তারা। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি বিধায় তারা এ কাজ করেন।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ