তিনটি সুখবর পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। সরকারি চকরিজীবীদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপে প্রাপ্ত ভাতার ওপর মতামত প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শেখ মোমেনা মনি স্বাক্ষরিত মতামত প্রদান পত্রটি রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) পুনরায় প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়েছে। এদিকে দুর্গম এলাকা অর্থ্যাৎ হাওর, দ্বীপ বা চর উপজেলায় কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পাহাড়ি ভাতার আদলে বিশেষ ভাতা চালুর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে চলতি বছরেই ফের বাড়তে পারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের তবে এবার বেতন স্কেলের কোনো সামগ্রিক পরিবর্তন হবে না। এর পরিবর্তে বিদ্যমান স্কেলে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়ানো হতে পারে। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের জন্য এই বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। তবে প্রস্তাবনাটি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রস্তাবনাটি কার্যকর করার জন্য মন্ত্রীসভার অনুমোদন প্রয়োজন হবে। মন্ত্রীসভা এ প্রস্তাব অনুমোদন করলে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে বর্ধিত এই বেতন পাবেন দেশে ১৩ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি।
উল্লেখ, সর্বশেষ ২০১৫ সালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় তাদের বেতন বেড়েছিল সর্বনিম্ন ৯১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০১ শতাংশ পর্যন্ত। মূল বেতনের পাশাপাশি আবাসান,চিকিৎসা ও উৎসব ভাতাসহ অন্যান্য ভাতাও বাড়ানো হয়েছিল।তবে বর্ধিত ভাতা কার্যকর হয় ২০১৬ সালের ১ জুলাই।
বর্তমানে একজন সদ্য বিসিএস উত্তীর্ণ কর্মকর্তার মূল বেতন ২২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে প্রযোজ্য আবাসান ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা পেয়ে থাকেন। ২০১৫ সালে নতুন বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার আগে তাদের মূল বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা। বর্তমানে বিদ্যমান বেতন স্কেল অনুসারে সর্বোচ্চ মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা। আর সর্বনিম্ন মূল বেতন ৮২৫০ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিনকে প্রধান করে সর্বশেষ পে কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিশনের সুপারিশ ছিল, পরবর্তীতে আর কোনো কমিশন গঠন না করে বিদ্যমান স্কেলের সঙ্গে মূল্যস্ফীতিকে সমন্বয় করে নিয়মিত বেতন বাড়ানোর। এর আলোকেই সরকার মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের বিবেচনায় রেখে বেতন-ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্তমান বাজেটে বেতন-ভাতা বাবদ বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৮ হাজার ৫১২ কোটি টাকা।২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।
৩০ শতাংশ পকেট ভাতা পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা: সরকারি চকরিজীবীদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপে প্রাপ্ত ভাতার ওপর মতামত প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শেখ মোমেনা মনি স্বাক্ষরিত মতামত প্রদান পত্রটি রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) পুনরায় প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সর্বসাকুল্য ভাতার শতকরা ৩০ শতাংশ পকেট ভাতা পাবেন সরকারি চকরিজীবীরা।
এতে বলা হয়, সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণকালে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রাপ্ত ভ্রমণ ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত অর্থ বিভাগ গত ২০১২ ও ২০১৩ সালে দুটি অফিস আদেশ দেয়া হয়। এ আদেশ অনুযায়ী বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের নিমিত্ত সাধারণ পর্যায়ভুক্ত কোনো ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রীয় অতিথি বিবেচিত হন।
অর্থাৎ যদি তার আহার, বাসস্থান বাবদ খরচ কোনো বিদেশি সরকার কিংবা সংস্থা বহন করে, তাহলে তিনি সে দেশের জন্য নির্ধারিত সর্বসাকুল্য ভাতার শতকরা ৩০ শতাংশ পকেট ভাতা প্রাপ্য হবেন। তবে তাকে আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ নগদ কোনো অর্থ প্রদান করা হয়ে থাকলে তিনি এ ভাতা পাবেন না। আহার ও বাসস্থান বাবদ খরচের জন্য ওই দেশ বা সংস্থা যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নগদ অর্থ প্রদান করে তাহলে সে ক্ষেত্রেও তিনি এ ভাতা প্রাপ্য হবেন না।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে এ বিষয়ে জটিলতা এড়ানোর স্বার্থে বিদেশে প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত জিওতে সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণকালে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রাপ্য ভ্রমণ ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত অর্থ বিভাগের ২০১২ সালের ৯ অক্টোবার এবং ২০১৩ সালের ১০ মার্চ অফিস স্মারক অনুযায়ী ৩০ শতাংশ পকেট ভাতা প্রাপ্যতার বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বিশেষ ভাতা: দুর্গম এলাকা অর্থ্যাৎ হাওর, দ্বীপ বা চর উপজেলায় কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পাহাড়ি ভাতার আদলে বিশেষ ভাতা চালুর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গত মঙ্গলবার (৫ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগের সচিবকে পাঠিয়েছে। যার অনুলিপি সব সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও (ইউএনও) পাঠানো হয়েছে।
দুর্গম এলাকা বিবেচনায় কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম; চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ; কক্সবাজারের কুতুবদিয়া; নোয়াখালীর হাতিয়া; সিরাজগঞ্জের চৌহালী; কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চর রাজিবপুর; পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী এবং ভোলার মনপুরাকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাওর, দ্বীপ বা চর উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, শাল্লা ও দোয়ারাবাজার; হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলাকে হাওর, দ্বীপ বা চর উপজেলার হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।
জানা যায়, ২০১৫ সালের বেতন কাঠামো অনুযায়ী এসব উপজেলায় কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পাহাড়ি ভাতার অনুরূপ ভাতা চালু করতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বর্তমান নিয়মে পার্বত্য জেলা সদর ও সদর উপজেলায় নিযুক্ত সকল সরকারি চাকরিজীবী মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা এবং অন্যান্য উপজেলায় মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পাহাড়ি ভাতা দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, দুর্গম অঞ্চল ঘোষিত ১৬ উপজেলার ক্ষেত্রেও একই হারে ভাতা দেওয়া হবে।