মানুষকে কোরআন শিক্ষা দেয়াই তার পেশা। তবে কোরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য মানুষের কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন না তিনি। নিজের তেমন কোনো জমি না থাকলেও বাবার থেকে প্রাপ্ত এক কাঠা জমির ওপর নিজের অর্থেই গড়ে তুলেছেন মক্তব ঘর।
প্রভাতের আলো ফুটে উঠতেই প্রতিদিন সেখানে কোরআন শিক্ষা দেন তিনি। কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড সুলতানপুর গ্রামে নীরবে-নিভৃতে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে মানুষকে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন হাফেজ আবদুল হান্নান।
হাফেজ আবদুল হান্নান জানান, ১৯৮৪ সালে সর্বপ্রথম বাড়ির উঠানে গ্রামের ছেলেমেয়েদের কোরআন শেখানো শুরু করেন। এরপর ব্যাপক হারে শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় ১৯৮৬ সালে বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে একটি মাটির ছাপড়াঘর তৈরি করে সেখানে কোরআন শিক্ষা অব্যাহত রাখেন। পরে ১৯৯৫ সালে বাবা মৃত আবদুল আজুজ শেখ তাকে এক কাঠা জমি দিলে সেখানে একটি ঘর নির্মাণ করে কোরআন শিক্ষা দেন।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত নিজের গ্রাম ছাড়াও আশপাশের এলাকার প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। হাফেজ আব্দুল হান্নান বলেন, আমি নিজে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করেছি। কোরআন শিক্ষাগ্রহণের সময় আমাদের শিক্ষক শিখিয়েছিলেন ‘যে নিজে কোরআন শিক্ষাগ্রহণ করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয় সে রাসূল (সা.)-এর কাছে উত্তম ব্যক্তি’। আমি তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নেই মানুষকে বিনা খরচে কোরআন শিক্ষা দেব। তাই আমি এখন পর্যন্ত করে যাচ্ছি, এবং যত দিন বেঁচে থাকব তত দিন কোরআন শিক্ষাদানের এই মহান কাজটি করে যাব।
তিনি আরও বলেন, আমার মক্তবে বিভিন্ন বয়সের মানুষ কোরআন শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। তাছাড়াও যেসব শিক্ষার্থীর কোরআন শরিফ কেনার সামর্থ্য নেই তাদেরকেও বিনামূল্যে কোরআন শরিফ দেয়া হয়।
নিজের আয় সম্পর্কে আব্দুল হান্নান জানান, নিজের আয় বলতে স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামতি করে বছরে ২০ মণ ধান পাই। এছাড়াও নিজের দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চলে।