বিশুদ্ধ সোনা ও দামি ক্রিস্টালের প্রলেপ দিয়ে তৈরি কাগজে সুসজ্জিত করে পুরো পবিত্র কুরআন লেখার উচ্ছভিলাসী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের এক মুসলিম ক্যালিওগ্রাফার। কাতারে বসবাসরত মুহাম্মদ সুলতান শেখ নামে এ ক্যালিগ্রাফার ইতোমধ্যে পবিত্র কুরআনের প্রায় অর্ধেক লেখার কাজ সম্পন্ন করেছেন।
মুহাম্মদ সুলতান শেখ একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। তিনি পবিত্র কুরআনের ক্যালিওগ্রাফার হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছেন। তার অন্যন্য ২৮টি একক পোশাক ডিজাইনের জন্য তিনি ফ্রান্সের এক আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ডিজাইন কোম্পানি থেকে কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলেন।
মুহাম্মদ সুলতান শেখ তার এ প্রতিভাকে কুরআনের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন ফ্রেমে কুরআনের আয়াতের চমৎকার ক্যালিওগ্রাফি আঁকতে শুরু করেনে। মুহাম্মদ সুলতান শেখ উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া একজন ক্যালিগ্রাফার। তিনি আরবি শিখেছিলেন। ফলে সঠিকভাবে আরবি লেখায় তিনি পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
২০০৬ সাল থেকে সুলতান শেখ কুরআনের আয়াতসমূহ ফ্রেমে ডিজাইন করে লেখা শুরু করেন। ২০১০ সালের মধ্যে ৪ বছরের ব্যবধানে তিনি কুরআনের আয়াতের ক্যালিওগ্রাফি খচিত বড় বড় ৪৬টি ফ্রেম তৈরি করতে সক্ষম হন। যা কাতারের শপিংমলে বিক্রি হয়েছিল। দর্শক ও ক্রেতাদের চাহিদাই মুহাম্মদ সুলতান শেখকে কুরআনের ক্যালিওগ্রাফি তৈরি ও পবিত্র কুরআন হাতে লিখতে উৎসাহিত করেছে।
সংবাদপত্রে ভারতীয় একজন ক্যালিগ্রাফের হাতে লেখা কুরআনের কপি দেখে নিজ থেকে ২০১০ সালে দামি ক্রিস্টাল ও বিশুদ্ধ সোনা দিয়ে কুরআন লেখার কাজে হাত দেন এ ক্যালিওগ্রাফার। কুরআনের এ পাণ্ডুলিপি লিখতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়াই ছিল তার প্রথম চ্যালেঞ্জ।
পরবর্তীতে কাতারের স্থানীয় বাজার থেকে তিনি পানি নিরোধক কাজ সংগ্রহ করে তাতে ক্রিস্টাল ও বিশুদ্ধ সোনার প্রলেপ দিয়ে তাতে পবিত্র কুরআনের পাণ্ডুলিপি লেখার কাজ শুরু করেন। ক্রিস্টাল ও সোনার প্রলেপে তৈরি পাণ্ডুলিপির কাগজটি পোকা-মাকড় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
ক্যালিগ্রাফার সুলতান শেখের মতে, পাণ্ডুলিপিটি ৭ বছরের মধ্যে শেখ করা দরকার ছিল। যা অর্থাভাবের কারণে সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন এ ক্যালিওগ্রাফার। পবিত্র কুরআনের নকশা ও সাজ-সজ্জায় পুরো ১৮ ক্যারেট সোনা ও দামি ক্রিস্টাল ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে তার।
উল্লেখ্য যে, তার লিখিত এ পাণ্ডুলিপিটি হবে ৬০৪ পৃষ্ঠার। আর পাণ্ডুলিপির ৬০ পৃষ্ঠায় থাকবে বিশুদ্ধ সোনার সাজ-সজ্জা। অস্ট্রেলিয়ার অরিজিনাল সোয়ারভস্কি ক্রিস্টাল ব্যবহার করা হচ্ছে এ পাণ্ডুলিপিটিতে। ক্রিস্টাল ব্যবহৃত যার প্রতি পৃষ্ঠার মূল্য পড়বে প্রায় ৬ হাজার কাতারি রিয়াল। প্রতিটি পৃষ্ঠার ওপরে ও নিচে বিভিন্ন সাজ-সজ্জায় পুরো পাণ্ডুলিপিটি ফুটিয়ে তোলা হবে।
পবিত্র কুরআনের এ পাণ্ডুলিপিটি তৈরিতে খরচ পড়বে লক্ষাধিক কাতারি রিয়াল। যা তৈরিতে আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছে ক্যালিগ্রাফার সুলতান শেখের এক বন্ধ শেখ বাশার।