Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

saudi-sistersপারিবারিক নির্যাতন সইতে না পেরে সৌদি আরবের দুই বোন নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় হংকংয়ে আত্মগোপন করে আছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় পারিবারিক এক অবকাশ যাপনের সময় পালিয়ে হংকং যান তারা। তাদের লক্ষ্য ছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে হংকং বিমানবন্দরে সৌদি আরবের কর্মকর্তারা তাদেরকে আটক করেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, হংকংয়ে ছয়মাস ধরে আত্মগোপনে থাকা ওই দুই বোনকে দেশে ফেরত পাঠানোর সবরকম চেষ্টা করছে সৌদি কনসল্যুটের কর্মকর্তারা। কিন্তু তারা আশঙ্কা করছেন, দেশে ফেরত গেলে তাদেরকে মেরে ফেলা হবে। এদিকে হংকংয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হবে।

chardike-ad

নতুন করে সৌদি আরবের এই দুই তরুণীর নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় বাড়ি ছেড়ে পালানোর খবর পাওয়া গেল। সম্প্রতি মৃত্যুভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালানো সৌদি তরুণী রাহাফকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় পড়ে যায়। অবশ্য শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার সহায়তায় রাহাফ কানাডায় আশ্রয় পান।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কা থেকে পালিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে সৌদি কনসল্যুটের কর্মকর্তারা হংকং বিমানবন্দরে তাদেরকে আটক করেন। দুই তরুণীকে দেশে পরিবারের কাছে পাঠানোর সবরকম চেষ্টা করছেন তারা।

পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মগোপনে থাকা ওই দুই সৌদি সহোদর হলেন, ২০ বছর বয়সী রিম ও তার দুই বছরের ছোট বোন রাওয়ান। ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করায় দু’জনেই সৌদি ফিরতে চাইছেন না। তারা বলছেন, যদি দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে তাদেরকে মেরে ফেলা হবে।

দুই বছর আগে রাওয়ানের ১৮তম জন্মদিনে তারা পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাই গোপনে অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করেন। শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের সময় কলোম্বতে অবস্থানরত তাদের বাবা-মা যখন ঘুমিয়ে পড়েন তখন পাসপোর্ট হাতে পান তারা।

পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পর কলম্বো থেকে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে বিমানে করে পাড়ি জমান। কিন্তু হংকং বিমানবন্দরে কিছু অপরিচিত ব্যক্তি তাদেরকে আটক করে পাসপোর্ট জব্দ করে।

তাদের অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ওই ফ্ল্যাইটটি বাতিল করে সৌদি আরবের ফ্লাইটে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন । কিন্তু অনেক চেষ্টা করে হংকংয়ে দর্শনার্থী হিসেবে ঢুকতে সক্ষম হন দুই বোন।

পরে তারা জানতে পারেন, বিমানবন্দরে যারা তাদেরকে আটক করেছিল তারা হংকংয়ে নিযুক্ত সৌদি আরবের কনস্যুল জেনারেল ও সহকারী কনস্যুল জেনারেল। তাই নিরাপত্তার ভয়ে হংকংয়ে গত ছয় মাসে তাদেরকে ১৩ বার নিজেদের বাসস্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে।

আত্মগোপনে থাকা ওই দুই সৌদি তরুণী বলছেন, তাদের বাবা প্রতিনিয়ত তাদেরকে মারধর করতো। তাছাড়া বয়সে বড় হলেও তাদের ভাইরাও তাদেরকে নির্যাতন করতে ছাড়েন নি। আর এটাই নাকি সৌদির পুরুষদের আচরণের ধরণ।

রিম বলেন, ‘তারা (ভাইয়েরা) আমাকে মারতে শুরু করলেও আমার বাবা তাদেরকে বাধা দেন না। তিনি ভাবেন, এর মাধ্যমেই তার ছেলেরা পুরুষ হয়ে উঠবে।’ এমনকি বোনের পোশাক নিয়ে আপত্তি তুলে তাদের দশ বছর বয়সী ছোট ভাইও নাকি সেই মারধরে অংশ নেয় বলে জানান তারা।

দুই বোনের অভিযোগ, সৌদি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। হংকংয়ের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী জন লি শুক্রবার বলেন, ‘পুলিশ পৃথক দুটি প্রতিবেদন পেয়েছে, যার একটি হলো হারানো ব্যক্তির আর একটি হলো তদন্তের অনুরোধ।’ তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেন নি।

হংকংয়ের অভিবাসীবিষয়ক সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাছাড়া হংকংয়ে অবস্থিত সৌদি কনসল্যুটেও যোগাযোগ করা হলে তারাও কোনো প্রতিক্রিয়া করেননি।

দুই সৌদি তরুণীর আইনজীবী অবশ্য বলছেন, গত বছরের নভেম্বরে তাদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। তাই এখন তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছেন।

সৌদির ওই বোনের আইনজীবী মাইকেল ভিল্ডার বলেন, ‘হংকং অভিবাসী কর্তৃপক্ষ এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদেরকে ‘‘সহ্য’’ করা হবে। এরপর কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। তারা এখন তৃতীয় আরেকটি দেশে আশ্রয়ের আশায় আছেন।’

সৌজন্যে- জাগো নিউজ