পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অংশ। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময়ে তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনীর একাংশ হতে পাকিস্তানের সামরিকবাহিনী গঠিত হয়। ইন্টারন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) এর মতে ২০১০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কার্যকর সেনা সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার, আধা-সামরিক বাহিনীতে কার্যকর সেনার সংখ্যা ৪ লাখ ২০ হাজার এবং রিজার্ভ সেনার সংখ্যা ৫ লাখ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারত বিভাজনের সিদ্ধান্ত হলে স্বাভাবিক ভাবে ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও দুই ভাগ করার (একটি পাকিস্তান, অপরটি ভারত) সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ১৯৪৬ সালের ১৯ অক্টোবর। এর আগে ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন ব্রিটিশ সরকার ৪ লাখ সদস্যের একটি বাহিনী পাকিস্তানের হবে বলে ঘোষণা দেয়। এরপর ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট তারিখে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক ওয়ালটার মেসার্ভি’র অধীনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মপ্রকাশ করে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রাথমিক লক্ষ্যগুলো হল- বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা, আভ্যন্তরীণ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী একত্রে তিনটি যুদ্ধে জড়িয়েছে।
সন্দেহ নেই স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বিভিন্ন সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশের প্রয়োজনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। সামরিক বাহিনীতে কর্মরত সেনা সদস্যদের সংখ্রার দিক থেকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বর্তন বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম সামরিক বাহিনী বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার’এর হিসেব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ছিল বিশ্বের ১৭তম শালী সামরিকবাহিনী। অন্যদিকে মুসলিমে বিশ্বে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সর্ববৃহৎ।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সম্পর্কে আরো কয়েকটি বিষয়-
১) সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা: আমেরিকান ক্রাইম নিউজ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) বিশ্বের এক নম্বর গোয়েন্দা সংস্থা। পাশাপাশি আইএসআই’কে বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ ও কার্যকরী গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৪৮ সালে আইএসআই প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে ও হুমকি পরাজিত করতে গোপনে কাজ করে থাকে আইএসআই।
২) পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী: ১৯৯৮ সালের ২৮ মে পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হয়। বিশ্বের সপ্তম দেশ হিসে এই অস্ত্রের অধিকারী হয় ইসলামাবাদ। পাশাপাশি প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হয় পাকিস্তান। এটা দেশটির জন্য বিশাল এক অর্জন।
৩) স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি): স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি এলিট ফোর্স। এই দলটি সাধারণভাবে ‘এসএসজি কমান্ডো’ নামে পরিচিত। এলিট ফোর্স হিসেবে বিশ্বের ৮ম প্রধান স্থান অধিকার করেছে এসএসজি কমান্ডো। তারা ‘ব্লাক স্টর্কস’ নামেও পরিচিত। এসএসজি কমান্ডোতে আসার আগে প্রত্যেককে কঠোর পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আসতে হয়। যেমন, তাদেরকে ১২ ঘণ্টায় ৩৬ মাইল দৌড়াতে হয় এবং ৫০ মিনিট একটানা দৌড়ে ৫ মাইলের সীমা পার হতে হয়।
৪) বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম সেনাবাহিনী: সেনা সদস্যের দিক থেকে পাকিস্তানের সামরিকবাহিনী বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম। ইন্টারন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) এর মতে, ২০১০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কার্যকর সেনা সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার, আধা-সামরিক বাহিনীতে কার্যকর সেনার সংখ্যা ৪ লাখ ২০ হাজার এবং রিজার্ভ সেনার সংখ্যা ৫ লাখ।
৫) পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর রয়েছে বিশ্বের সেরা যুদ্ধ বিমান ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার। বিশ্বের সেরা ৬টি অ্যাটাক হেলিকপ্টারের মধ্যে ৪টিই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর।
৬) মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের সামরিকবাহিনীতেই রয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী সেনাসদস্য।
৭) সামরিকবাহিনীর প্রত্যেক সেনার পিছনে পাকিস্তান খরচ করে ১০ হাজার মার্কিন ডলার।
৮) পাকিস্তানের রয়েছে সামরিক প্রযুক্তিতে অন্যতম সেরা মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ক। এটি বিশ্বের ১১তম সেরা ট্যাঙ্ক। এটি পাকিস্তানে নির্মিত এবং বর্তমানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই ট্যাঙ্ক ব্যবহার করছে।
৯) বিশ্বের একমাত্র সেনাবাহিনী হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতেই আত্মহত্যার হার ০ শতাংশ (০%)। বিশ্বের আর কোনো দেশেরই এই অর্জন নেই।
১০) জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিশ্বে পাকিস্তান তৃতীয় বৃহত্তম সেনাসদস্য সরবরাহকারী দেশ।