সিউল, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪:
অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠানই নামিদামি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য ছাড়মূল্যে বিক্রি করছে। কিন্তু নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের ছাড়ে পণ্য বিক্রি করে না। ফলে দামের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যাচ্ছে তারতম্য। অনেকেরই দাবি অনলাইন এ প্রতিষ্ঠানগুলো শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ব্যবহার করে নকল পণ্য বিক্রি করছে। এতে নির্মাতা ও গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের সমস্যার সমাধানে জোটবদ্ধ হয়েছে শীর্ষ তিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল, স্যামসাং ও সনি। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
স্বাভাবিকভাবেই ভালো কোনো প্রযুক্তি পণ্যের দামও একটু বেশি হবে। বাজার দখল বাড়াতে অধিকাংশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের খুব উন্নত পণ্য যথাসম্ভব কম দামে বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু নির্মাতাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক অনলাইনকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান। এরা স্যামসাং, অ্যাপল, সনির মতো প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে নকল পণ্য বিক্রি করছে।
নকল পণ্য ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে মূল কোম্পানিগুলোর বিক্রিতে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে চলতি মাসের শুরুর দিকে আলোচনা বসেন সনি, অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
প্রতিষ্ঠানগুলো নিত্যনতুন প্রযুক্তি পণ্য বাজারে ছাড়ছে। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে পণ্যগুলো কেনার সামর্থ্য অনেক সাধারণ গ্রাহকের নেই। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এ সমস্যার সুযোগ নিচ্ছে অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠান। এ তিনটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের দাম হ্রাসের ব্যাপারে একত্রে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে।
অনলাইনে কেনাকাটার হার বিশ্বব্যাপী বিপুল হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘরে বসেই এখন গ্রাহকরা অনেক পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পারছেন। বহু গ্রাহক এখন কেনাকাটার জন্য অনলাইনের ওপর নির্ভর করেন। এ গ্রাহকদেরই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার চেষ্টা করছে নকল পণ্য নির্মাতারা।
সাধারণত একজন গ্রাহক বাজারে গিয়ে কম মূল্যের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করে এমন পণ্যই খোঁজেন। এদিকে নকল পণ্যগুলোর দাম কম থাকায় গ্রাহকরা অনেকাংশেই না বুঝে ঠকছেন। কিন্তু এর ফাঁকে বিশাল পরিমাণ অর্থের ব্যবসা করে নিচ্ছে নকল পণ্য তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ সমস্যার সমাধানে অ্যাপল, স্যামসাং ও সনি প্রতিটি বাজারে নিজস্ব কিছু এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। ফলে গ্রাহকরা এ এজেন্টদের কাছ থেকে আসল পণ্য কিনতে পারবেন।
এক্ষেত্রে উচ্চ দাম তাদের পণ্যের বাজার বৃদ্ধিতে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে। মজার ব্যাপার হলো, যে প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার দখলে নিজেদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা করে, তারাই এখন সমস্যা মোকাবেলায় একত্র হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আসল পণ্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে তুলনামূলক কম দামে বাজারে ছাড়ার কথা বিবেচনা করছে।
ভারতের বেশকিছু বাজারে সনি, অ্যাপল, ক্যানন, নকিয়া ও স্যামসাং গ্রাহকদের জন্য পরামর্শদাতা নিয়োগ দেবে। তারা গ্রাহকদের বিভিন্ন পণ্যের দাম, বাজার, পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে ধারণা দেবে।
এদিকে অনলাইন বাজারের পরিধি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু অনেক বাজারেই পণ্যের ওপর এ প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্ধারিত দাম নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনো কর্তৃপক্ষ বা আইন নেই। এতে অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম দামে পণ্য বিক্রি করছে। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে, তাদের পণ্যগুলো কতটা আসল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। এ অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোর কম দামে পণ্য বিক্রির কারণে সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি বাজার বিশ্লেষকদের।
ভারত প্রযুক্তি পণ্যের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বাজার। বাজারটিতেও এ সমস্যা লক্ষ করা যাচ্ছে। ভারতের সবচেয়ে বড় অনলাইন সেলফোন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান দ্য মোবাইল স্টোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিমানসু চক্রবর্তী বলেন, কোনো ব্র্যান্ড যদি গ্রাহকদের জন্য পরামর্শদাতা নিয়োগ করে, তবে সেক্ষেত্রে অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো দাম নির্ধারণ করতে পারবে না। অল্প সময়ে বাজারের বর্তমান সমস্যার সমাধান সম্ভব না হলেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত সমস্যা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে লেনোভোর ভারত শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমর বাবু বলেন, ‘আমরা কখনই ই-কমার্সের বিরোধী নই। কিন্তু অনেক বাজারেই মূল পণ্যের দামে তারতম্য লক্ষ করা যাচ্ছে, যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এসেছে।’ এদিকে ক্যামেরা নির্মাতা ক্যাননের ভারত শাখার নির্বাহী ভিপি ভার্দাজ বলেন, জাপানের প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে ভারতের বাজারে পরামর্শদাতা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর মাধ্যমে পণ্যের দরদামে তারতম্য অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব হবে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে বর্তমান জোট কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। সূত্রঃ বণিকবার্তা।