নাসরিন দ্বিতীয় স্বামীকে বাদ দিয়ে ২০১২ সালে প্রেমের সম্পর্কের জেরে তৃতীয় স্বামী হিসেবে রফিকুল ইসলামকে বিয়ে করেন। রফিকুলের সঙ্গে বিয়ের আগেও তার দুটি বিয়ে হয়েছিল। রফিকুল ২০১৪ সালে প্রবাস জীবনে ওমান চলে যায়।
রফিকুল প্রবাসী থাকাবস্থায় এ সংসারে মনিরা খাতুনের (৬) জন্ম হয়। এদিকে নাসরিন অন্য এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এ সংবাদে প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসেন রফিকুল ইসলাম। দেশে ফেরার পর পরকীয়ার সন্দেহে রফিকুল ও নাসরিনের মধ্যে প্রায়ই কলহ লেগে থাকতো। এরপর নাসরিন ২০১৭ সালে গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকায় বসবাস শুরু করে সেখানে একটি কারখানায় চাকরিরত অবস্থায় এক গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে নিরুদ্দেশ হয়ে বিয়ে করে। চারমাস পর ওই সংসার থেকে ফিরে এসে আবারও রফিকুলের সঙ্গে সংসার শুরু করে নাসরিন।
এদিকে নাসরিন আর কোনো ছেলের সঙ্গে পরকীয়া প্রেম করবে না বলে স্বীকারোক্তি দিলে প্রায় তিন মাস আগে তারা গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা গ্রামে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। তারা দুজনই স্থানীয় ডেনিম্যাক গার্মেন্টস লিমিটেড নামক কারখানায় চাকরি নেয়। এরপরও কারখানার এক সহকর্মীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে নাসরিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রফিকুল ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে কাপাসিয়ার চাপাত গ্রামের নিজ বাড়িতে চলে যায়। ওই রাতে কন্যা সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা নিয়ে শনিবার বিকেলে গিলারচালা ভাড়া বাড়িতে আসেন রফিকুল। ওইদিন নিজ সন্তানকে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি।
পরদিন রোববার বিকেল সোয়া চারটায় দিকে তার একমাত্র কন্যা মনিরাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ ঘরের খাটের নিচে পাতিলের ভেতর রেখে পালিয়ে যান তিনি।
সোমবার ভোররাতে গাজীপুর মহানগরের নীলেরপাড়া এলাকা থেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর এভাবে খুনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন কন্যা হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পাষণ্ড বাবা।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম (২৮) গাজীপুরের কাপাসিয়ার উপজেলার চাপাত গ্রামের মৃত মাইন উদ্দিনের ছেলে। তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার (২৭) একই উপজেলার হালজোড় গ্রামের গোলাপ হোসেনের মেয়ে। রফিকুল-নাসরিন দম্পতির একমাত্র কন্যা সন্তান ছিলেন নিহত মনিরা খাতুন।
রফিকুল ইসলাম স্বামী সন্তানসহ শ্রীপুর পৌর এলাকার গিলারচালা গ্রামের হাজি ইয়াসিন মিয়ার ভাড়া বাড়িতে থেকে স্থানীয় ডেনিম্যাক গার্মেন্টস লিমিটেডে স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করতো ও শিশু মনিরা স্থানীয় মোহাম্মদ আলী কিন্ডার গার্টেনের প্লে শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
শ্রীপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান জানান, সন্ধ্যায় শিশুটির মা নাসরিন আক্তার মুঠোফোনে মনিরা নিখোঁজের বিষয়টি জানায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রোববার রাত পৌনে নয়টার ভাড়া বাড়ির ঘরের ভেতর খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে ঘরের খাটের নিচে পাতিলের (ডেগ) ভেতর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শ্রীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) জাবেদুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় নাসরিন আক্তার বাদী হয়ে স্বামী রফিকুল ইসলামের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ হত্যার ঘটনায় বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামীমা খাতুনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।