গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, বাংলাদেশের আবাসন ব্যবস্থায় আমরা একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চাই। ঝিলমিল প্রকল্প, পূর্বাচল প্রকল্প, উত্তরা তৃতীয় ফেজ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন হাউজিং প্রকল্প, উত্তরায় পরিকল্পনাধীন হাইরাইজ বিল্ডিং প্রকল্প, এসব ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এগিয়ে আসছেন। আমরা বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর বানাতে চাই। মানুষই আমাদের বড় সম্পদ।
মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার ১৮নং সেক্টরে রাজউকের উত্তরা এপার্টমেন্ট প্রকল্প পরিদর্শনকালে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সাহাদাত হোসেন, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদ সারোয়ার, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, অদূর ভবিষ্যতে পূর্বাচল হবে স্যাটেলাইট সিটি, যে সিটি আমাদের প্রতিবেশী কোনো দেশ দেখেনি। উত্তরা ৩য় ফেজ হবে একটি আধুনিক নগর, যেটি দেখে মানুষ বিস্মিত হবে- বাংলাদেশের ভেতরে এত উন্নত ও পরিকল্পিত নগর কিভাবে সম্ভব।
তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের সকল মানুষের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে। এ ম্যান্ডেটে কারো কোনো গাফিলতি প্রত্যাশা করিনা। কারো কোনো গাফিলতি দৃশ্যমান হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দায়-দায়িত্ব অবশ্যই নিতে হবে। দেশের জন্য জনবান্ধব কাজ করে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অঙ্গীকার, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং আধুনিক রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা সকল নাগরিককে নিশ্চিত করা। নাগরিক দয়ার পাত্র নয়, নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। তার মৌলিক অধিকারের অন্যতম হলো, আবাসন।
তিনি বলেন, বাসস্থানের পরিকল্পিত, পরিবেশসম্মত ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে- বাংলাদেশের একটি মানুষও বাসস্থানের অভাবে থাকবে না, কোনো মানুষই যেনো ভাসমান না থাকে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশের একেবারে প্রান্তসীমায় বসবাস করা মানুষের জন্য স্বল্পসময়ের মধ্যে নিরাপদ, পরিবেশসম্মত বাসস্থান নিশ্চিত করা হবে। যারা ছিন্নমূল, তাদের জন্য প্রকল্প নেয়া হয়েছে, নির্মাণাধীন প্রকল্প রয়েছে এবং কোথাও কোথাও সম্পন্নও করা হয়েছে। একজন লোকও ঢাকার রাস্তায়, শহরের রাস্তায় বা গ্রামে কারো বাড়ির পাশে ঘুমিয়ে থাকবে না, তার জন্য আবাসন ব্যবস্থা থাকবে। অতীতের কোনো সরকার বস্তিবাসীদের জন্য সরকারিভাবে কোনো আবাসনের পরিকল্পনা নেয়নি, ভিক্ষুক থেকে শুরু করে বিশেষ পর্যায়ের মানুষের জন্য এত চমৎকার ব্যবস্থা যে, তারা স্বল্পমূল্যের ভাড়া দিয়ে সারাজীবন বিল্ডিং এ বসবাস করবে, সে পরিকল্পনা নিয়ে অনেক প্রকল্প নির্মানাধীন রয়েছে, যেগুলো দ্রুত গতিতে শেষ করা হবে।
শহরের নাগরিক সুবিধাকে গ্রামে পৌঁছে দেয়া নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিলো উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সে অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কাজ করছে। গ্রামের মানুষকে বিদ্যুৎ, গ্যাস, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকের প্রয়োজনীয় অন্যান্য দাপ্তরিক সুবিধা নিশ্চিত করে নগরের সুবিধা আমরা গ্রামের মানুাষর কাছে পৌঁছে দিতে চাই। গ্রামে আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে, পানির সংযোগ থাকবে, গ্রামে আধুনিক বিপনী বিতান হবে। বিকেন্দ্রীকরণ করতে না পারলে মানুষের উপচে পড়া ভিড় শহরে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে, যে আর শৃংখলা রক্ষা করা যাবে না।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাতারে এনেছেন, ভবিষ্যতে উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে, সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, মানুষের গড় আয় বেড়েছে, শিশু মৃত্যু ও মাতৃমূত্যুর হার কমেছে, সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
সৌজন্যে- নয়া দিগন্ত