পুলিশ সপ্তাহে বাহিনীটির পক্ষ থেকে তোলা প্রায় সব দাবিতে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিবারের দুই সদস্যদের জন্য আমৃত্যু পর্যন্ত রেশন দেওয়াসহ বেশ কিছু বিষয় সরকার প্রধানের কাছে তুলেন তারা।
সোমবার পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন এবং পদক দেওয়া শেষে পুলিশ মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে পুলিশের কনস্টেবল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যদার কর্মকর্তারা নানা দাবি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী সবগুলো দাবিতেই সায় দিয়ে বলেন, এগুলোর সবগুলোই সরকারের সক্রিয় বিবেচনা রয়েছে।
পুলিশের দাবি মধ্যে ছিল, পুলিশের জন্য আলাদা একটি মেডিকেল কোর গঠন, পরিবারের দুই সদস্যদের আমৃত্যু পর্যন্ত রেশনিং চালু করা, কর্মরত অবস্থায় কোন পুলিশ সদস্য মারা গেলে তার পরিবার পাবে ১৫ লাখ টাকা। যা আগে ছিল আট লাখ টাকা। আর কর্মরত অবস্থায় গুরুতর আহত হলে তিনি পাবেন আট লাখ টাকা যা আগে ছিল চার লাখ টাকা।
প্রতিটি বিভাগের পুলিশ হাসপাতালে আইসিইউয়ের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিও জানানো হয় বৈঠকে। পাশাপাশি পুলিশের জন্য একটি মেডিকেল কোর গঠনের দাবিও তোলা হয়।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল আহাদ খান প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘চাকরিরত অবস্থায় কোন পুলিশ সদস্য মারা গেলে আর্থিক অনুদান হিসেবে যে অনুদান দেয়া হয়, তা খুবই কম। এই অনুদানে নিহত ও আহত পুলিশ সদস্যের পরিবারকে চলতে হিমশিম খেতে হয়। তাই চাকরিরত অবস্থায় কোন পুলিশ সদস্য মারা গেলে ১৫ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত হলে আট লাখ টাকা দেওয়ার দাবি করছি।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কনস্টেবল কামরুন্নাহার বলেন, ‘শারীরিক দিক দিয়ে সুস্থ থাকার জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু পুলিশের কোনো ক্রীড়া কমপ্লেক্স নেই। এই বাহিনীর ক্রীড়া কমপ্লেক্স দরকার।’
পুলিশের বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট সিনথিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের জন্য ট্রাফিক ভাতা ২০১১ সালের বদলে ২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী দেয়া হোক।’
পুলিশ বাহিনীতে সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সাদিক বলেন, ‘রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, সারদা প্রশিক্ষণ একাডেমিসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত শয্যা নেই। এসব হাসাপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের খুবই অভাব। পোস্টিং নিয়ে আসলেও চিকিৎসকেরা থাকতে চান না। বর্তমানে সবগুলো হাসপাতালেই অধিকাংশ পদ খালি রয়েছে।’
পরিবারের দুই সদস্যকে আমৃত্যু রেশন সুবিধা দেয়ার দাবি জানিয়ে কুড়িগ্রামের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে কর্মরত অবস্থায় পুলিশের যে কোনো সদস্য তার পরিবারের সর্বোচ্চ চার ব্যক্তির জন্য রেশন পেয়ে থাকেন। কিন্তু অবসরে গেলে কোন রেশন পান না। তাই পুলিশের যে কোন সদস্য অবসরে যাওয়ার পরও আমৃত্যু দুই সদস্যের রেশন সুবিধা দাবি করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি বিবেচনাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এটা পাবেন।’ পুলিশ সদস্যদের যানবাহন সমস্যা দূর, সরকারি কাজে ব্যক্তিগত যে মোটর সাইকেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানি সুবিধা দেওয়ার দাবিও উঠে।
পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে আরো পদ সৃষ্টি, জনবল বাড়ানো, চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পোশাকসামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি প্রদানেরও দাবি জানানো হয়।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা বেশকিছু দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছেন। তিনি সেগুলো নীতিগতভাবে অনুমোদনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
সৌজন্যে- ঢাকাটাইমস