উত্তর কোরিয়ার নারী সেনাদের জীবন দুর্বিষহ। অপুষ্টিতে ভোগা এই সব নারী সেনাদের কাছে ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমনকি বেশির ভাগ নারী সেনার মাসিক ঋতুস্রাব পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। এমনই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন লি সো ইয়ন নামে এক উত্তর কোরিয়ার এক সাবেক নারী সেনা।
তিনি জানিয়েছেন, প্রায় দশ বছর ধরে লি সো ইয়নকে শুতে হয়েছিল একটা ব্যাংক বেডের নিচের তলায়। ঘরটা তাকে শেয়ার করতে হত আরও জনা পঁচিশেক নারীর সঙ্গে। ড্রয়ারের ওপরে রাখতে হত ফ্রেমে বাঁধানো দুটো করে ফোটোগ্রাফ। একটি কিম জং উনের পূর্বসুরী কিম ইল সুংয়ের ও অপরটি তার উত্তরসূরী প্রয়াত কিম জং ইলের।
নারী সেনাদের ঠিকভাবে গোসল করার পর্যন্ত সুযোগ ছিল না। ঘামের গন্ধে অস্থির হয়ে যেতে হত। কাপড় পরিষ্কার করা বা রান্নাবান্নার মতো বেশ কিছু গৃহস্থালির কাজও করতে হত তাদের। পরিশ্রমের পরও পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তেন তারা।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘বাহিনীতে যোগ দেওয়ার ছ’মাস থেকে এক বছরের মধ্যে আমাদের আর ঋতুস্রাব হত না। চরম অপুষ্টি আর ভীষণ একটা মানসিক চাপের পরিবেশে থাকতাম বলেই সেরকমটা হয়েছিল। নারী সৈনিকরা অবশ্য বলত তাদের মাসিক হচ্ছে না বলে তারা খুশি। খুশির কারণ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে তার ওপর আবার মাসিক হলে তাদের আরও শোচনীয় অবস্থার ভেতর পড়তে হত।’
লি সো ইয়ন আরও জানাচ্ছেন, মাসিক ঋতুস্রাবের দিনগুলো নারী সেনারা কীভাবে পার করবে, তার কোনো ব্যবস্থাই বাহিনীতে ছিল না। এমনও হয়েছে, লি সো ইয়ন ও তার নারী সহকর্মীদের বাধ্য হয়ে অনেক সময় একজনের ব্যবহার করা স্যানিটারি প্যাড আবার অন্য একজনকে ব্যবহার করতে হয়েছে। লি সো ইয়ন যদিও স্বেচ্ছাতেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন, ২০১৫ সালে উত্তর কোরিয়া নিয়ম করেছে যে ১৮ বছর বয়সের পর সে দেশে সব মেয়েকেই বাধ্যতামূলকভাবে সাত বছর সামরিক বাহিনীতে কাজ করতে হবে।
গবেষকদের তারা কেউ কেউ জানিয়েছেন, অনেক সময় পুরুষ সহকর্মীদের সামনেই তাদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয়। এর ফলে তাদের ওপর যৌন হামলার ঝুঁকিও বাড়ে, কিন্তু তাদের কিছু করার থাকে না। উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীতে যৌন নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটে ব্যাপক হারে। অনেকেই ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
‘কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ধর্ষিতা নারী সেনারা কেউ ভয়ে সাক্ষ্য দিতেই এগিয়ে আসে না। ফলে ধর্ষণকারী পুরুষদেরও কোনও সাজা হয় না কখনোই’- এমনটা বলেছেন জুলিয়েট মরিলট নামে এক গবেষক।